Breaking News
Loading...
Wednesday, May 26, 2010

সুনিধি চৌহান জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী। জন্মগ্রহন করেন ১৯৮৩ সনের ১৪ আগস্ট। মামুলি এক ট্যালেন্ট হান্টের প্রতিযোগী প্রতিভার প্রমাণ দিয়ে ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যালেন্ট হান্ট শো’র বিচারক বনে যাওয়া কিংবা একের পর এক জনপ্রিয় গান উপহার দেয়ার কারণে বহুদিন থেকেই শ্রোতাদের প্রিয় এক গায়িকা হিসেবে সমীহ আদায় করে নিয়েছেন সুনিধি চৌহান।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। তখনও গোটা ভারতে সংগীতের প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রমের এতটা ব্যপকতা ছিল না। এমনকি রাতারাতি টিভিতে সম্প্রচারের মাধ্যমে এ ধরনের কোনো প্লাটফর্মের বিজয়িকে তারকা বানিয়ে দেয়ার উদহারণও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ছিল। কাজেই স্রেফ গানের জন্য দিল্লী থেকে মুম্বাইতে পাড়ি জমানো এক কিশোরী সেদিন সেরাদের সেরা হয়েও অন্যদের মনোযোগ কাড়তে পারেননি। ভারতে প্রথমবারের মতো কোনো টিভি চ্যানেলে প্রচারিত মিউজিক্যাল ট্যালেন্ট হান্ট শো ‘মেরি আওয়াজ সুনো’-তে প্রথম হয়েও তার ভাগ্যে কেবল জুটেছিল শিশু শিল্পীর তকমাই। এমনকি ঐ অনুষ্ঠানে চ্যাম্পিয়ন হবার সুবাদে প্রকাশিত তার ‘আইরা ঘাইরা নাথু খাইরা’ অ্যালবামটিকেও প্রচার করা হয়েছিল ছোটদের অ্যালবাম হিসেবে। আর এই ঘটনাটিই যেন ভীষণ এক জেদ তৈরি করেছিল মেয়েটির মনে। সে প্রতিজ্ঞা করেছিল, কারো কৃপা কিংবা প্রচারণার জোরে নয়, বরং নিজের প্রতিভার জোরেই সংগীতে তার আসনটুকু পাকাপোক্ত করে নেবে সে। আর মেয়েটির সেই প্রতিজ্ঞার জোর যে কতটা তীব্র ছিল তারই প্রমাণ আজকের ব্যচ্চ ও জনপ্রিয় গায়িকা সুনিধি চৌহান। একসময় প্রতিভা অন্বেষণের প্লাটফর্মও যাকে আলোচনায় আনতে ব্যর্থ হয়েছিল সেই সুনিধিই আজ ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এর মতো জনপ্রিয় ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামের বিচারক। অন্যদিকে বলিউডে তার গাওয়া গানের সংখ্যাও বহু আগেই ছাড়িয়ে গেছে ২০০০ গানের সীমা।

মূলত মাত্র ৪ বছর বয়সে দিল্লির স্থানীয় একটি মন্দিরের এক আয়োজনে গান গাইবার মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছিল সুনিধির সংগীত ভুবনের পদচারণা। এ সময় একে একে বিভিন্ন প্রতিযোগিতাতেও সেরা হতে থাকেন সুনিধি। আর সুনিধি’র এই প্রতিভা দেখেই তাবাসসুম নামে স্থানীয় এক টিভি উপস্থাপিকা তাকে উৎসাহিত করেন মুম্বাই এ এসে ভালো কিছু করার জন্য। প্রথম দিকে মুম্বাইতে কল্যানজি’র ‘লিটল ওয়ান্ডার ট্রুপ’-এর প্রধান গায়িকা হিসেবেই গাইতে শুরু করেন সুনিধি। এরই মাঝে ‘মেরি আওয়াজ শুনো’র সুবাদে একটি অ্যালবাম বের করার পাশাপাশি আদেশ শ্রীবাস্তবের তত্ত্বাবধানে ‘শাস্ত্র’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করার সুযোগ পান। প্রথমবারের মতো কণ্ঠ দেন ‘লাড়কি দিওয়ানি দেখো’ শিরোনামের একটি গানে। তবে তুমুল শ্রোতাপ্রিয়তা বলতে যা বোঝায় এই গানটি ঠিক অতোটা পরিচিতি এনে দিতে ব্যর্থ হয় সুনিধিকে। একে একে তিনি কাজ করেন গ্যাং, ভিরগতি, দাহেক, বাড়ে দিওয়ালে, রাজা কি আয়েগি বারাত সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে। দেখতে দেখতে তার গানের সংখ্যাও ছাড়িয়ে যায় সাড়ে তিনশ’র উপরে। তবে সত্যিকারের হিট গান বলতে যা বোঝায় ঠিক সে ধরনের হিট গান সুনিধি উপহার দেন ১৯৯৯ সালে রামগোপাল ভার্মার ‘মাস্ত’ ছবির মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রে গাওয়া সুনিধি’র ‘রুকি রুকি অ্যায় জিন্দেগি’ গানটি সে সময়কার শ্রোতাদের মাঝে আলোচিত হবার পাশাপাশি লাইম লাইটে নিয়ে আসে সুনিধিকেও। সুনিধিও ক্রমে ক্রমে পেতে থাকেন একাধিক প্রথম সারির চলচ্চিত্রের প্লেব্যাকের সুযোগ। নতুন ও পুরনো প্রজন্মের প্রায় সব শিল্পীর সাথেই গাইতে শুরু করেন। কাজ করেন বাপ্পি লাহিড়ি, এ আর রহমান, আনু মালিক, যতিন ললিত, শংকর-এহসান-লয়, প্রীতম, রাজেশ রোশান, নাদিম-শ্রাবণ, আনন্দ-মিলিন্দ, ভিশাল শেখর এবং হিমেশ রেশমিয়াসহ ভারতের সকল প্রথিতযশা মিউজিক ডিরেক্টরের সাথেই। অন্যদিকে সুনিধির গানে রুপালি পর্দায় ঠোঁট মেলান মাধুরী দীক্ষিত, কাজল এবং ঐশ্বরিয়া থেকে শুরু করে কারিনা, প্রীতি, রানী, বিপাশা এবং প্রিয়াংকাসহ প্রথম শ্রেণীর সব নায়িকাও। মূলত বলিউডের গানে সুনিধির এই বৈচিত্র্যময় উপস্থিতি, কণ্ঠের গভীরতা আর ব্যপকতাই তাকে খুব দ্রুত শ্রোতাদের প্রিয় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। মাত্র ১৪ বছরের বলিউড ক্যারিয়ারে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডের মতো প্লাটফর্মে বার বার সেরা গায়িকা হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে জয় করেন তিনটি অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া স্টার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড, আইফা অ্যাওয়ার্ড এবং জি-সিনে অ্যাওয়ার্ডের মতো প্রথম সারির পুরস্কারগুলোও একাধিকবার বগলদাবা করেন সুনিধি। অন্যদিকে নানা সময়ে গাওয়া তার অসংখ্য জনপ্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে মেহবুব মেরে (ফিজা), বুমরো (মিশন কাশ্মির), ধুম মাচালে (ধুম), ক্যায়সি প্যাহেলি (পরিনিতা), দিদার দে (দাস), বিড়ি জালাইলে ও বেদী (ওমকারা), সোনিয়ে (আকসার), আজা নাচলে (আজা নাচলে), ড্যান্স পে চান্স (রাব নে বানাদে জোড়ি), ক্রেজি কিয়া রে (ধুম টু), দেশি গার্ল (দস্তানা)সহ অসংখ্য গান।

0 comments:

Post a Comment