Breaking News
Loading...
Wednesday, May 26, 2010

বেবী ইসলাম বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক। ১৯৩১ সালের ৩ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদে বা ১৯২৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলার বেলগাছি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পারিবারিক নাম আনোয়ার ইসলাম। চিত্রগ্রহণে তার হাতেখড়ি হয়েছিল ভারতের প্রখ্যাত পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক অজয় করের কাছে। 'হারানো সুর', 'বড়দি' ছবিতে অজয় করের সঙ্গে চিত্রগ্রহণের কাজ করেন তিনি। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান চিত্রগ্রাহক এবং এফডিসিতে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৯ সালে উর্দু ভাষায় 'তানহা' নামের একটি ছবি পরিচালনা করেন বেবী ইসলাম। 'সোয়ে নদী জাগে পানি', 'শ্যামলী', 'সাজঘর', 'ক খ গ ঘ ঙ', 'সূর্যস্নান', 'নীল আকাশের নীচে', 'আকাশ আর মাটি', 'নয়নের আলো'সহ অনেক ছবিতে মূর্ত হয়ে আছে তার চিত্রগ্রহণের শৈল্পিক দক্ষতা। ১৯৭৫ সালে নির্মাণ করেন 'চরিত্রহীন'। ঋতি্বক ঘটকের সঙ্গে 'তিতাস একটি নদীর নাম' ও 'যুক্তি তক্কো গপ্পো' ছবিরও চিত্রগ্রহণ করেছেন তিনি।
চলচ্চিত্রে কাজ করার ভাবনা
আলফ্রেড হিচককের ছবি দেখে দেখেই মনের ভেতর তৈরি হয়েছিল ক্যামেরার পেছনে কাজ করার স্বপ্নটা। একদিন ঠিকই তিনি পূরণ করেছেন তা। এ জন্য তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ কষ্টকর এক পথ। বাবা ছিলেন স্কুল ইন্সপেক্টর আর মা স্কুলশিক্ষিকা। পৈতৃক নিবাস চুয়াডাঙ্গার বেলগাছিতে হলেও জন্ম তাঁর মুর্শিদাবাদে নানির বাড়িতে। সেখানেই বেড়ে উঠেছেন। তিনি ছিলেন আশুতোষ কলেজের ছাত্র। কিন্তু ছবি আঁকা আর ছবি তোলা যাঁর নেশা, তাঁর পড়াশোনা কি ভালো লাগবে। তাই পারিবারিক বন্ধু প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা অজয় করকে গিয়ে বললেন, ‘ছবিতে কাজ করতে চাই।’
একদিন অজয় করের আহ্বানে ১৯৪৭ সালের ১৭ আগস্ট চলে যান কলকাতার টালিগঞ্জে ইন্দ্রলোক স্টুডিওতে।

চলচ্চিত্রে শুরু
১৯৫২ সালে অজয় করের সঙ্গে চলে যান মাদ্রাজ। কাজ করেন পল্লীতরু ও ফাইরি বামা নামের দুটি ছবিতে। সেখান থেকে বোম্বে। ১৯৫৩ সালে সয়লাব ও কাস্তি নামের দুটি হিন্দি চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তারপর আবার ফিরে আসেন কলকাতায়। অজয় করের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন সাজঘর, হারানো সুর, বড়দিদি প্রভৃতি বাংলা চলচ্চিত্রে।

ঢাকার চলচ্চিত্রে
১৯৫৬ সালে চলে আসেন ঢাকায়। তথ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন চিত্রগ্রাহক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৯ সালে চিত্রগ্রাহক হিসেবে প্রথম কাজ করেন আসিয়া ছবিতে। তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেন। তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি উর্দু ভাষায়, তানহা। ১৯৬২ সালে বৈরুত চলচ্চিত্র উত্সবে প্রশংসিত হয় ছবিটি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরিচালনা করেন আরেকটি ছবি চরিত্রহীন।

আলফ্রেড হিচককের চিত্রগ্রাহকের সান্নিধ্যে
চলচ্চিত্রের ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে ১৯৬২ সালে তিনি ইতালি যান। সেখানে আলফ্রেড হিচককের প্রথম দিককার ছবির চিত্রগ্রাহক গিতানো ডি ভেন্তিমিরিয়ার সান্নিধ্যে আসেন।

ঋত্বিক ঘটকের ছবি ও অন্যান্য
উপমহাদেশের পুরোধা চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম ছিল বেবী ইসলামের বিখ্যাত কাজ। ঋত্বিক ঘটকের শেষ চলচ্চিত্র যুক্তি তক্কো গপ্পোরও চিত্রগ্রাহকও তিনি। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবি হলো সূর্যস্নান, সোনালী আকাশ, ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো, রাজা সন্ন্যাসী, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, সোয়ে নদীয়া জাগে পানি, নীল আকাশের নীচে, ক খ গ ঘ ঙ, এতটুকু আশা, রাজা সাহেব, নয়নের আলো, কসাই প্রভৃতি।

সংসার
অভিনেত্রী তন্দ্রা ইসলাম তাঁর স্ত্রী। পুত্র জয় ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মিনোসোটায় এবং কন্যা সুমনা ইসলাম বাংলা হিউস্টনে বসবাস করছেন।

অর্জন
চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, হীরালাল সেন, জহির রায়হান, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা এবং বাচসাস পুরস্কারসহ চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

হাসপাতাল গড়া
মা মোতাহারুন্নেছার ইচ্ছা ছিল, তাঁর ছেলে ডাক্তার হবে। কিন্তু মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি বলেই চুয়াডাঙ্গার বেলগাছিতে নির্মাণ করেছেন ‘মোতাহারুন্নেছা প্রসূতি ও সদ্যোজাত শিশু সেবা হাসপাতাল’। লালমাটিয়ার বাড়ি থেকে যে ভাড়া পান, তা নিয়েই প্রতি মাসে ছুটে যেতেন বেলগাছিতে মায়ের নামে দেওয়া সেই হাসপাতালে।

স্বপ্ন
বয়স আশি পেরোনো মানুষটি মৃত্যুর কিছুদিন আগেও নতুন ছবি তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন। দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘চিত্রগ্রহণে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, ইচ্ছা ছিল সেটা নতুন প্রজন্মের কাছে ফুরিয়ে দিয়ে যাই। কিন্তু সে সুযোগ হয়নি।’
মৃত্যু
২০১০ সনের ২৬ মে রাত ১১টা ৩২ মিনিটে ঢাকার মিরপুরের ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ)৭৯ বয়সে মারা যান। দীর্ঘদিন তিনি অগ্ন্যাশয় ক্যানসার ও বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।

0 comments:

Post a Comment