Breaking News
Loading...
Sunday, June 13, 2010

আদ্রে ভজনেসেনস্কি সোভিয়েত যুগের সর্বাধিক উদযাপিত কবিদের একজন। মার্কিন কবি রবার্ট লাওয়েল তাকে বলেছেন 'One of the greatest living poets in any language'- যে কোন ভাষায় শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন। তার কবিতা যারা অনুবাদ করেছেন তাদের মধ্যে ডব্লিউ এইচ অডেনও রয়েছেন। কবিতা পাঠ যে একটি ‘পারফর্মিং আর্ট’ ভজনেসেনস্কি তা প্রমাণ করেছে। তিনি স্টেডিয়ামপূর্ণ মানুষের সামনে কবিতা আবৃত্তি করেছেন এবং এই মানুষেরা কবিতা শোনার জন্য টিকেট করেই স্টেডিয়ামে ঢুকেছেন।
আদ্রে ভজনেসেনস্কি'র জন্ম ১২ মে ১৯৩৩। শৈশবে তার আগ্রহ ছিল চিত্রকলা ও স্থাপত্য বিদ্যার প্রতি। প্রকৌশল বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৫৭ সালে মস্কো আর্কিটেকচারাল ইনস্টিটিউট থেকে। কবিতার জন্য আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই।
তার মেন্টর (Mentor) হয়ে উঠলেন রুশ সাহিত্যের আরেক দিকপাল বরিস পাস্তেবনাক। চৌদ্দ বছর বয়সে ভজনেসেনস্কি তার কবিতা পাঠিয়ে দেন পাস্তেরনাকের কাছে। অসমবয়সী দু’জনের বন্ধুত্বের এমন দ্বিতীয় একটি তুলনা একালে মেলে না। ১৯৬০ সালে মৃত্যুর আগে পাস্তেরনাক লিখে গেছেন- সাহিত্যে তোমার প্রবেশ দ্রুত এবং অশান্ত। আমি সন্তুষ্ট কারণ এটা দেখা পর্যন্ত আমি বেঁচে আছি। ভজনেসেনস্কির উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: দ্যা ট্রিত্র্যাঙ্গুলার পিয়ার, এন্টিওয়ার্ল্ডস, স্টেইন্ড গ্লাস মাস্টার, ভিডিওমস এন্ড ফরচুন টেলিং বাই দ্যা বুক, এ্যারো ইন দ্যা ওয়াল, ভায়োলোনসেলো ওকলিফ এবং জুলো এন্ড এভস।
আদ্রে ভজনেসেনস্কি সোভিয়েত যুগের সর্বাধিক উদযাপিত কবিদের একজন। সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভ জনসমক্ষে তাকে ‘বুর্জোয়া প্রথাবাদী’ বলে গাল দিয়েছেন, অভিযুক্ত করেছেন। ১৯৬২-র ডিসেম্বরে শাসকদল কমিউনিস্ট পার্টির একটি সংবর্ধনায় রুশ বুদ্ধিজীবীদের সাথে তিনিও ছিলেন। এই অনুষ্ঠানের মধ্যেই ক্রুশ্চেভ ভজনেসেনস্কিকে দেখিয়ে বলে উঠেন, এই নতুন পাস্তেরনাককে দেখুন! আপনি কালই একটি (বেদেশি) পাসপোর্ট পেতে চান? আপনি চান? চলে যান, আপনি গোল্লায় যান।
ক্রুশ্চেভের ক্রোধে ভজনেসেনস্কির কোন ক্ষতি হয়নি। আসলে রাষ্ট্রশাসকদের ক্রোধ মূলত তাদের দুর্বলতা ঢাকার জন্যই। এটি কেবল তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য না, গোটা পৃথিবীর বেলায়ই প্রয়োজ্য।
ভজনেসেনস্কি ও তার প্রজন্মের সাহিত্যেক শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা যারা ‘১৯৬০ দশকের সন্তান’ হিসাবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়েছেন, যারা এক সময় স্ট্যালিনবাদের ভিত্তি উৎখাত করতে ক্রুশ্চেভকে উৎসাহ দিয়েছেন। সমর্থন জানিয়েছেন, দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, ক্রুশ্চেভ তাদের ধরে রাখতে পারেননি। যে কোন দেশে, স্বৈরকাঠামোরই হোক কি গণতান্ত্রিক মুখোশে স্বৈরতান্ত্রিক হোক স্বৈরশাসক মনস্তাত্বিকভাবেই মুক্তমনা মানুষের সামনে দুর্বল বোধ করেন। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান হবার পরও ক্রুশ্চেভের কাছে ভজনেসেনস্কির পরিচিতি ছিল অতি প্রগতিবাদী হিসাবে। ১৯৬৩ সালে একই কায়দায় হুমকি দেন- ‘চলে যান ভজনেসেনস্কি সাহেব, চলে যান আপনার বিদেশি মুরুব্বিদের কাছে। ১৯৬০ দশকে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত আলঙ্কারিক ও দ্ব্যর্থবোধক কবিতা রচনার জন্য তার উপর চড়াও হয়। কর্মকর্তারা মনে করেন ভজনেসেনস্কির কবিতার পঙক্তির মধ্যে সোভিয়েত বিরোধী ধারণা লুকিয়ে থাকতে পারে।
ক্রুশ্চেভের হুমকি ও সরকারি হস্তক্ষেপ বিদেশে চমৎকার প্রচারণা পায়। দেশেও তার কবিতা গোপনে ছাপা ও বিতরণ হতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালিসহ পশ্চিমের অনেক দেশের কনসার্ট হলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার শ্রোতা সামনে রেখে তিনি কবিতা আবৃত্তি করতেন।
স্ট্যালিনের শাসন যে দেশকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রেখেছে, তার উত্তরাধিকারীরাও যে অবস্থার তেমন পরিবর্তন ঘটায়নি- সে দেশের কবির কণ্ঠে কী ধ্বনিত হয় তা শুনতে মানুষের আগ্রহের কমতি ছিল না।
আদ্রে ভজনেসেনিস্কর বন্ধুত্ব হয় কবি এ্যালেন গিজবার্গের সাথে। নাট্যকার আর্থার মিলার ও তার তখনকার স্ত্রী ম্যারিলিন মনরোর সাথে। তার কবিতা উপভোগ করতেন সিনেটর রবার্ট কেনেডি।
ভজনেসেনস্কি তার কবিতা ‘আই আম গয়া’ যখন আবৃত্তি করতেন তখন দর্শক ও শ্রোতার স্নায়ু বিদ্যুতায়িত হত বলেই মনে করনে ইংরেজ সমালোচক জন বেইলে।
এক সময় ভজনেসেনস্কির কাছে গিজবার্গ, হাইদেগারের সান্নিধ্যে দেশের বাইরে অবস্থানই সুখকর ছিল। কিন্তু ৬৩ বছর বয়সে (মৃত্যুকালে তার বয়স ৭৭ বছর) তিনি বলেছেন, দেশ ছেড়ে যেতে তার ভালো লাগে না-এ সময়, বিশেষ করে নতুন সহস্রাব্দে কোন কবির মৃত্যু পৃথিবীকে এতোটা নাড়া দেয়নি, যেমন দিয়ে গেল আদ্রে ভজনেসেনস্কির মৃত্যু। ১ জুন ২০১০ ভজনেসেনস্কি মৃত্যুবরণ করেছেন, সমাহিত হয়েছেন ৪ জুন। ভজনেসেনস্কি তার সময়ের রুশ কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্বরধ্বনি, অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি। বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবিরা তাকে পাঠ করেছেন এবং ভজনেসেনস্কি অনূদিত হয়েছেন তাদের কারো কারো হাতে। মৃত্যুর অনেক আগে থেকেই তিনি সাহিত্যাঙ্গনে ‘জীবন্ত ধ্রুপদ’ হিসাবে সমাদৃত হয়ে আসছিলেন।
আদ্রে ভজনেসেনস্কির তিনটি কবিতা

0 comments:

Post a Comment