Breaking News
Loading...
Wednesday, July 21, 2010

বুলবুল আহমদ Bulbul Ahmed
বুলবুল আহমেদের জন্ম ঢাকার আগামসি লেনে ১৯৪১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। বুলবুল আহমেদের আসল নাম তাবাররুক আহমেদ। বুলবুল তার ডাকনাম। তার বাবা মরহুম মোহাম্মদ খলিল আহমেদ ও মাতা মরহুমা মোসাম্মদ মোসলেমা বেগম।
বুলবুল আহমেদের বাবা ছিলেন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি সরকারের ইনকামট্যাক্স বিভাগে চাকরি করতেন। যে কারণে বুলবুল আহমেদকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকতে হয়েছে।
তবে শৈশব আর কৈশরের দূরন্ত দিনগুলো বুলবুল আহমেদের কেটেছে ঢাকার আগামসি লেনেই। বুলবুল আহমেদ ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট , নটরডেম কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন। ঢাকা কলেজে পড়াশুনাকালীন সময়েই অভিনয়ের সাথে সম্পৃক্ত হন বুলবুল আহমেদ। ঢাকা বিশ্বদ্যালয় থেকে এম এ পাস করার পর চাকরী নিলেন তৎকালীন ইউনাইটেড ব্যাংকে বর্তমানে যা জনতা ব্যাংক নামে পরিচিত। একজন ব্যাংকার হিসেবে তিনি ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত চাকরী করেছেন। ১৯৬৮ সাল থেকে তিনি টিভি নাটকে অভিনয়ের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তার মামাতো ভাই প্রবীণ নাট্য ও চলচ্চিত্র ব্যাক্তিত্ব নাজমুল হুদা বাচ্চুর হাত ধরেই ১৯৬৫ এর আগে উলড়া নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মঞ্চনাটকে বুলবুল আহমেদের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭২ সালে ইউসুফ জহিরের ( আব্দুল্লাহ ইউসুফ ইমাম এর ছদ্মঞ্চনাম) ‘ইয়ে করে বিয়ে’ ছবিতে সহ নায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে চলচ্চিত্রে বুলবুল আহমেদ নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। এ ছবিতেই বুলবুল আহমেদের অভিনয় দেখে আলমগীর কবির বুলবুল আহমেদকে তার সূর্যকন্যা ছবির জন্য চুক্তিবদ্ধ করেন। আর এরপর সীমানা পেরিয়ে , রূপালি সৈকতে, মোহনাসহ একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেন। মূলত আলমগীর কবিরের ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই সৃজনশীল ছবির নায়ক হিসেবে তার ব্যাপক পরিচিতি আসে। সীমানা পেরিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছিলেন। এছাড়া বধূবিদায় (১৯৭৮), শেষ উত্তর ( ১৯৮০) ছবিতে অভিনয়ের জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। জীবন নিয়ে জুয়া ছবিতে অভিনয় করার সময় বুলবুল আহমেদ জনতা ব্যাংকের চাকরী ছেড়ে দেন। নতুন নায়ক হিসেবে এই ছবির মাধ্যমেই বুলবুল আহমেদ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

১৯৮৭ সালে বুলবুল আহমেদ রাজলক্ষী শ্রীকান্ত ছবির মাধ্যমে পরিচালকের খাতায় নাম লেখান। ছবিটি প্রযোজনাও করেন তিনি। ছবিটি ব্যাপক ব্যবসা সফল হয়। চারটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বারোটি শাখায় বাচসাস পুরস্কার লাভ করে। প্রথম ছবির পরিচালক হিসেবেই তিনি পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হচ্ছে সূর্যকন্যা, সিমানা পেরিয়ে, রূপালি সৈকতে, মোহনা, জীবন নিয়ে জুয়া, রাজলক্ষী শ্রীকান্ত, ভালো মানুষ , শেষ উত্তর, দেবদাস, মহানায়ক , হারানো মানিক, কলমীলতা, এখনই সময়, দি ফাদার, লাভ ইন আমেরিকা, নওজোয়ান, ঘর সংসার, সোনার হরিণ, স্মৃতি তুমি বেদনা, ওয়াদা, শহর থেকে দূরে, বধূ বিদায়, অঙ্গার, অচেনা অতিথি, সোহাগ, পুরস্কার, অপমান, শুভদা, সময় কথা বলে, জন্ম থেকে জলছি, স্বামীসহ দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন।
বুলবুল আহমদের স্ত্রী ডেইজি আহমেদও একজন অভিনেত্রী। তার ২ মেয়ে ঐন্দ্রিলা ও তিলোত্তমা ও ১ ছেলে শুভ।
শেষ জীবনে বুলবুল আহমেদ হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। ২০১০ সনের ১৯ জানুয়ারি গুরুতর অসুস্থ হয়ে তিনি স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যান। এরও আগে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সে সময় তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে চিকিৎসকদের চেষ্টায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
১৪ জুলাই রাতের খাবার শেষে অসুস্থ বোধ করছিলেন বুলবুল আহমেদ। স্ত্রী ডেইজি আহমেদকে বললেন এক কাপ চা করে দিতে। আশা করেছিলেন, চা খেলে বোধ হয় কিছুটা সুস্থ বোধ করবেন। কিন্তু চা-টুকুও শেষ করতে পারেননি তিনি। তার আগেই অচেতন হয়ে পড়েন। দ্রুত স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার বুলবুল আহমেদকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। বুলবুল আহমেদের দেহ ১৬ জুলাই বিকেল ৩টায় এফডিসিতে আনা হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবার পর তাঁকে নেওয়া হয় রামপুরার বিটিভি ভবনে। সেখানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে তাঁকে নেওয়া হয় গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদে। সেখানে আরো একবার জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে বুলবুল আহমেদকে দাফন করা হয়।

0 comments:

Post a Comment