Breaking News
Loading...
Friday, July 16, 2010

“জাগো জাগো সর্বহারা, সনাতন ও বন্দী কৃতদাস/ শ্রমিক দিয়াছে আজি সাড়া/ উঠিয়াছি মুক্তির আশায়.. ..মোরা মিলি একসাথ”- কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন আর হেনা দাসের গাওয়া এই গান, যেনো একই তন্ত্রীতে ধ্বনিত বারংবার।

অবিভক্ত বাঙলার নারী আন্দোলনকে যাঁরা অগ্রসর করে নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে হেনা দাস অন্যতম। সিলেটে ১৯২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁর জš§। ভারতীয় উপমহাদেশে ত্রিশের দশক ছিলো বিক্ষোভ, বিদ্রোহ আর আন্দোলনের সূচনাকাল। নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। ১৯৪০ সালে ম্যাট্রিক পাশ করার পর তিনি সুরমা ভ্যালি গার্লস স্টুডেন্টস কমিটি গঠনের কাজে যুক্ত হন। ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। একই বছরের আগস্টে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি আইনসঙ্গত বলে ঘোষিত হলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সারাদেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট বাড়তে থাকে, দেখা দেয় ভয়ঙ্কর মন্বন্তর (বাঙলা ১৩৫০)। একদিকে ফ্যাসিস্ট শক্তির আক্রমণ প্রতিরোধ করার প্রশ্ন, অন্যদিকে আত্মরক্ষার প্রশ্ন। ওই অবস্থায় সারা বাঙলায় গড়ে উঠে নতুন মহিলা সংগঠন ‘মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’। সিলেটে এই সংগঠনের নেতৃত্ব দেন হেনা দাস। নারী আন্দোলনের পাশাপাশি তিনি গণনাট্যেরও নেতৃত্ব দেন। জনগণ বিপুলভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলো সেই নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক চেতনায়। সে সময় কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে এবং উদ্যোগে সারা ভারতে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন প্রগতিশীল ধারার সৃষ্টি হয়েছিলো। এ ধারা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রবল জোয়ারকে নতুন রসে সঞ্জীবিত করেছিলো। ১৯৪৬ সালে সিলেট জেলায় ছাত্র আন্দোলনকে আরো জোরদার করার কাজে যোগ দেন হেনা দাস। ১৯৭৪ সালে তিনি বিএ পাশ করেন। ১৯৪৮ সালে রোহিণী দাসের সঙ্গে হেনা দাসের বিয়ে হয়। রোহিণী দাস ছিলেন সিলেট জেলায় কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা। দুইজনের চিন্তায় আরো ঋদ্ধ হয়েছে তৎকালীন সমাজ। স্বাধীনতা আন্দোলনের পাশাপাশি হেনা দাস যুক্ত হয়েছিলেন নানাকার আন্দোলনের সঙ্গে। নানাকার নারীদের সচেতন করে তোলা ও আন্দোলন সংগঠিত করার দায়িত্বে ছিলেন হেনা দাস।

১৯৫০ সাল। মুসলীম লীগ সরকারের উস্কানিতে পূর্ব পাকিস্তানে দাঙ্গা বাধানো হয়েছিলো। তখন ঢাকাতেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছিলো। ১০ বছর আত্মগোপন থাকার পর হেনা দাস শিক্ষকতায় ফিরে আসেন ১৯৫৮ সালে। শুরু হয় নতুন জীবন। এরপর ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য।
২০০৯ সালের ২০ জুলাই তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
হেনা দাসের প্রথম জীবনাবসান দিবসে দেশের মানুষ হয়তো নানা আয়োজনে তাঁকে স্মরণ করবেন। কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়। তাঁর জীবনাবসানের এক বছর, কিন্তু তাঁর প্রতি, তাঁর কাজের প্রতি আমরা কতোটুকু সম্মান প্রদর্শন করতে পেরেছি। তাঁকে নিয়ে কোনো স্মারক গ্রন্থ  এখনো প্রকাশিত হয়নি। অথচ, তিনি আমাদের জন্য এক অনির্বাণ অনুপ্রেরণা। হেনা দাস আজো আমাদের স্মৃতিতে-কর্মে উজ্জ্বল হয়ে আছেন, এক নীল ছোঁয়া কিংবদন্তীর মতো।

0 comments:

Post a Comment