মহান বিজ্ঞানী ও জ্ঞানসাধক টমাস হেনরি হাক্সলি ১৮২৫ সালের ৪ঠা মে ইংল্যান্ডের মিডলসেক্সের ইলিং-এ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জর্জ হাক্সলি ছিলেন স্কুল শিক্ষক। মাতাল ও পাগলাটে ধরনের স্বভাব ছিল তাঁর। আবার স্কুলে পাঠদানেও ছিলেন অসফল। ফলে স্কুল শিক্ষকের চাকরি থেকেও বরখাস্ত হন।
আবার মা রেচেলও ছিলেন ভীষণ বদরাগী মহিলা। এমনতরো পিতা-মাতার আট সন্তানের মধ্যে হেনরি হাক্সলি ছিলেন সপ্তম। আবার তাদের আর্থিক অবস্থাও ভাল ছিলো না। ১৮৩৩ সালে হেনরি হাক্সলি তাঁর পিতা যে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, ইলিং-এর সেই স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৩৫ সালে তাঁর পিতা স্কুল থেকে বরখাস্ত হন। পিতার চাকরি চলে যাবার পর তাঁর স্কুলে পড়ার পাঠ চুকে যায়। কিন্তু হেনরি হাক্সলি দমবার পাত্র নন, স্কুল ও পারিবারিক পরিবেশ ভাল না হলেও তিনি ছিলেন কলুষমুক্ত ও নৈতিক গুণাবলীর অধিকারী। এ সময় তিনি নিজ চেষ্টায় ১২টি ভাষা রপ্ত করেন। তাঁর আগ্রহ জš§ায় জীববিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যায়। স্কুল, কলেজে না পড়েও নানা রকম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করতে থাকেন। ১৯৪০ সালে তিনি লন্ডনের জনৈক ডাক্তারের কাছে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ নেন। এর কিছুদিন পর লন্ডনের চারিং ক্রস হাসপাতালের মেডিক্যাল স্কুলে বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হন। এই স্কুলের সব পরীক্ষায় তিনি প্রথম হতেন এবং পুরস্কার পেতেন। স্কুলে পড়ার সময় তিনি একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা করেন। এতো অল্প বয়সে অমন জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ রচনা বোদ্ধা মহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে ও অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভে ধন্য হয়।
এরপর হেনরি হাক্সলি একুশ বছর বয়সে এইচ এম র্যাটল নামক সমুদ্রগামী জাহাজে অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনের চাকরি নেন। জাহাজটি দক্ষিণ সাগর আবিষ্কারে যাচ্ছিলো। এ সময় তিনি চার্লস ডারউইনের পদ্ধতিতে সামুদ্রিক জীবন ও বন্যপ্রাণীদের ওপর গবেষণা করতে থাকেন তাঁর এসব গবেষণা কর্ম প্রকাশিত হলে তিনি লন্ডনে জীববিজ্ঞানী হিসাবে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। এই পর্যায়ে সমুদ্রযাত্রা শেষে ফিরে এলে এক বছরের মাথায় লন্ডনের রয়েল সোসাইটি তাকে ফেলো নির্বাচিত করে। এর ফলে তাঁর সম্মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ব্রেসলাউ, এডিনবার্গ, ডাবলিন, কেম্ব্রিজ, অক্সফোর্ড, বোলোগ্না, আরল্যানজেন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। এসময় তিনি আবার সমুদ্র ভ্রমণে বের হন। ১৮৫৪ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পৌঁছেন। এখানে তিনি হেনরিয়েটা হিদার্ন নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেন। হাক্সলি হিদার্নের দাম্পত্য জীবন ছিল খুবই মধুময়। তাদের আটটি ছেলেমেয়ে জš§ নেয়। প্রথম সন্তানটি অল্প বয়সে মারা যায়। বাকী সাত সন্তান শুধু সুপ্রতিষ্ঠিতই নয় একেকজন একেকটা রত্ম হিসেবে পরিগণিত হন। ১৮৬০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ডারউইনের মতবাদের ওপর এক বিতর্ক সভার আয়োজন করে। হাক্সলি ডারউনের মতবাদের পক্ষে বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখেন। এর আগে হাক্সলি জিওলজিক্যাল সোসাইটির সেক্রেটারি হন। পরে তিনি এই সোসাইটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৮৭৮ সালে তিনি দর্শনের ওপর গবেষণা করেন। যদিও তিনি দর্শনের ছাত্র বা গবেষক ছিলেন না। মহান বিজ্ঞানী, জ্ঞানসাধক হেনরি হাক্সলি ১৮৯৫ সালের ২৯ জুন পরলোকগমন করেন।
টমাস হেনরি হাক্সলি
Info Post
0 comments:
Post a Comment