Breaking News
Loading...
Saturday, August 21, 2010

আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভি রহমানের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। তার বাবা মরহুম অধ্যক্ষ জালাল উদ্দীন আহমেদ ও মা বেগম হাসিনা বানু। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছিলেন ১ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জননী। তার স্বামী মো. জিল্লুর রহমান সাবেক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আইভি রহমান ছাত্রজীবন থেকেই গণতন্ত্রের সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৬২ সালে আইয়ুব শাহীর সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সেপ্টেম্বরে শিক্ষা কমিশন আন্দোলন এবং ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালীন তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। '৭০-এর নির্বাচনে আইভি রহমান ঢাকা শহরে নির্বাচনের সাংগঠনিক কাজে মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মীদের নেতৃত্ব দেন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বেগম সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তিনি রাইফেল ও ফাস্ট-এইড ট্রেনিং নেন এবং অন্য মহিলাদেরও ট্রেনিং দেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকারের অধীনে ভারতে বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে কানাডিয়ান ইউনাইটারি মিশন এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সহায়তায় খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও উদ্যম সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি জয়বাংলা রেডিওতে নিয়মিত কথিকা পাঠ করতেন।

'৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে স্বেচ্ছাসেবী নারী সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা সমিতি পুনর্গঠনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আমৃত্যু তিনি এ সমিতির উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৭২ সালে গঠিত বাংলাদেশ নারীবর্ষ উদযাপন কমিটির তিনি ছিলেন একজন উদ্যোক্তা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীদের ওপর নির্বিচারে অত্যাচার ও নিপীড়নের সময় তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৮ সালে আইভি রহমানকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়। ১৯৮০ সালে তাকে নির্বাচিত করা হয় বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।

বেগম আইভি রহমান স্কুল জীবনে মুকুল ফৌজ, গার্লস গাইডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজসেবা শুরু করেন। বাংলার অনগ্রসর মহিলা সমাজকে রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিকভাবে উদ্বুদ্ধ এবং সচেতন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি ছিলেন অগ্রগামী সৈনিক।

নারী আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন।

২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনবিরোধী আইন প্রণয়নে ছিল তার অনবদ্য অবদান। তিনি নারী অধিকার সচেতনে আন্তর্জাতিক সংস্থা 'ইন্টারন্যাশনাল এলায়েন্স অব উইমেন'-এর সম্মানিত সদস্য ছিলেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি The American Biographic Institute USA কর্তৃক Woman of the year ২০০০ নির্বাচিত হন। এর পাশাপাশি দেশেও বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বেগম আইভি রহমান বাংলাদেশ মহিলা সমবায় সমিতির চেয়ারম্যানসহ আরো অনেক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১-২০০৪ সময়কালে তিনি মহিলা সমিতির সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক সংস্থা The Associated Country Women of the World (ACWW)-এর সেন্ট্রাল এন্ড সাউথ এশিয়ার এরিয়া প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। সমাজসেবা/জনসেবা ক্ষেত্রে অনন্য ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখার জন্য বেগম আইভি রহমানকে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০০৯ (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়েছে।

বেগম আইভি রহমান দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সক্রিয় থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে স্মরণকালের ভয়াবহতম ও বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হন। ঘটনাস্থলে তার দুটি পা ছিন্নভিন্ন হয়ে উড়ে যায়। চিকিৎসার জন্য প্রথম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়। ৫৭ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২৪ আগস্ট রাত ২টায় তিনি শাহাদতবরণ করেন।

0 comments:

Post a Comment