Breaking News
Loading...
Wednesday, September 1, 2010

সংগীত শিল্পী সাইয়ানের জন্ম ১৯-- সনের । এক সময় তাকে জোর করে বসিয়ে রেখে তাকে শেখানো হচ্ছিল গান। খালার মুখে শুনে শুনে অবশেষে শেখা হলো গানটি। পরদিন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে স্কুলের অনুষ্ঠানে সেই ছোট্ট মেয়েটি যখনই গেয়ে উঠল ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’ গানটি, সবাই বেশ অবাকই হয়ে গেল। তার কণ্ঠের মায়াভরা সুরটা সবাইকে ছুঁয়ে গিয়েছিল সেদিন।
মাইক্রোফোন হাতের সেই ছোট্ট মেয়েটি আজ একই সঙ্গে হারমোনিয়াম, হারমোনিকা গিটার, মাউথ অর্গান, কি বোর্ড বাজিয়ে গান করতে পারেন। শুধু গানই করেন না, নিজে গান লেখেন, নিজেই করেন সুর।
গল্পটা ব্যতিক্রমী সংগীতশিল্পী সায়ানের। তাঁর জীবনের প্রথম স্টেজ পারফরমেন্স ছিল এটা। ছোটবেলায় একবার একটা মাউথ অর্গান উপহার পেয়েছিলেন তিনি। তা দিয়েই প্রথম সুর তুলতে শেখা। তখন গানের সঙ্গে পরিচয় ঘটেনি তাঁর। গানের চর্চার শুরুটা হয় সায়ানের হারমোনিয়াম দিয়েই, ৯-১০ বছর বয়সে। একবার শখ করে কিনে ফেললেন অনেকগুলো হারমোনিকা। এক বন্ধুর পরামর্শে কানাডা থেকে খুঁজে খুঁজে কিনে নিলেন একটা মাউথ অর্গান হোল্ডার। ঘরে বসে এমনি এমনি বিভিন্ন গানের যন্ত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে গানের সঙ্গে তা দিলেন জুড়ে। ‘ছোটবেলায় বেশ কয়েকবার গিটার বাজাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। প্রেম হয়নি তখন গিটারের সঙ্গে, তাই বোধ হয়।’ এভাবেই বলেন সায়ান। তারপর ২১-২২ বছরের দিকে কর্ড বাজাতে বাজাতে শেখা হয়ে গেল গিটার হারমোনিকা। কি বোর্ড, সেতার সবকিছুই বাজানোর চেষ্টা করেছেন, তবে কিবোর্ডে পিয়ানোর সুর তোলা যত সহজ মনে হলো, সেতারটা তত হলো না। সায়ান অবশ্য প্রয়োজনের তাগিদ থেকেই একটু একটু আয়ত্ত করে নিয়েছেন এ বাদ্যি-বাজনা। বাইরে গান গাইতে শুরু করার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে একটা দল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সবার সংগীত-মনমানসিকতাটার সঙ্গে মিল না থাকায় নিজেই শুরু করে দিলেন একা একা। ‘একলা চলো রে’ বলে হাসলেন সায়ান।
প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হলেও এখন বেশ মানিয়ে নিয়েছেন সায়ান। নিজেই লেখেন গান, নিজেই করেন সুর, নিজেই বাজান ইচ্ছেমতো। গিটার, মাউথ অর্গান, কিবোর্ড কোনোটাতেই তাঁর মুনশিয়ানা নেই বলে দাবি করেন তিনি। তবে নিজের গানের সঙ্গে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু বাজনা ঠিকই জুড়ে দিতে পারেন তিনি। সায়ান বলেন, গানের মূল জায়গা তিনটি—লেখা, সুর, গাওয়া। এর মধ্যে যন্ত্রের ব্যবহারের অংশটা ১০ কি ১৫ ভাগ। বরং ৮৫ ভাগই হলো বাকি এ তিনটির। অর্থাৎ সংগীতটা যন্ত্রনির্ভর নয়, বরং কথা ও সুরনির্ভর। তাই যিনি গান গাইছেন, তিনিই সবচেয়ে বেশি অনুভব করেন কতটুকু যন্ত্রের আবেগ যোগ করা হবে তাতে।
সায়ান গান শুনতে পছন্দ করেন বেশ। হেমন্ত, কিশোর, মান্না দে থেকে শুরু করে পাশ্চাত্য ঢঙের গান। সায়ানের এই বহুমুখী প্রতিভার শুরুটা কিন্তু গোলাপ আর কাঁটা নিয়ে প্রথম নিজের লেখা গানে। সুরও করেছিলেন সেটার। তবে তাঁর গানের সঙ্গে আত্মীয়তাটা হয়েছে কানাডায় যখন চার বছর ছিলেন, সে সময়। প্রথম নিজের লেখা গান নিয়ে মঞ্চে অনুষ্ঠান করেন ১৯৯৯ সালে মন্ট্রিয়লে।
সায়ানের ভাবনাই হচ্ছে তাঁর এক একটি গান। সে ভাবনায় কখনো আসে মানব-মানবীর প্রেম-বিরহ, কখনো দেশ, কখনো নাগরিক জীবন আবার কখনো বা মানুষের স্বভাবের দ্বৈধতা। গান করতে গিয়ে ভালো লাগাটার অংশই তাঁর বেশি, তবে খারাপ লাগাও কিছু রয়েছে। তাঁর খুব খারাপ লাগে যখন কোনো গায়ককে দেখেন কোনো মাদক নিতে। ‘সংগীত নিজেই একটা নেশা, একে ভালো করে গাইতে নতুন নেশার কোনো দরকার নেই।’ এভাবেই বলেন সায়ান। এবারের ঈদেও ভীষণ ব্যস্ত সায়ান। ভাইবোন মিলে অর্থাৎ হাবিব আর এরশাদ মিলে বের হচ্ছে যাস্ট ওয়াহিদস অ্যালবামটি। নিজের লেখা ও সুর করা দুটি গান আর চাচার একটি গানসহ তিনটি গান গাইবেন তাতে। সায়ান সংগীতশিল্পী নন, বরং সংগীতশ্রমিক হিসেবে শ্রোতাদের উপহার দিতে চান ভালো ভালো গান।

0 comments:

Post a Comment