সাধনার মাধ্যমে মানুষ অসাধ্যকে সাধন করতে পারে। তেমনি এক অসাধ্য সাধনকারী নারী জানকো তাবেই। দুর্বল ফুসফুস আর লিকলিকে এক দেহ- এ নিয়েই ছোটবেলা কেটেছে জানকো তাবেইর। তখন হয়তো কেউই ভাবেনি এ মেয়েটিই একদিন ইতিহাসের পাতায় নাম লিখাবেন। কিন্তু বাস্তবে সেটিই হয়েছে। মাত্র চার ফুট নয় ইঞ্চি উচ্চতার ক্ষুদ্রতা তাকে দুর্বল করে রাখতে পারেনি। এসব সীমাবদ্ধতা সঙ্গে নিয়েই তিনি এমন এক কাজ করলেন, যা এর আগে কেউ করে দেখাতে পারেনি। জানকো তাবেই হলেন সেই মহিলা যিনি ১৯৭৫ সালের ১৬ মে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন।
তাবেইর জন্ম ২৩ মে, ১৯৩৯ সালে জাপানে। ছোটবেলায় একবার স্কুলের আউটডোর এক্টিভিটিতে গিয়ে আরোহণের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। যখন তিনি মাত্র ১০ বছর বয়সী তখন তার এক শিক্ষকের সঙ্গে তিনি প্রথমবার পাহাড়ে আরোহণ করেন।
ক্ষুদ্র শরীর নিয়েও ১০ বছরের শিশুটি বাকিদের তুলনায় অনেক উপরে আরোহণ করতে পারত। সম্ভবত তার এই ক্ষুদ্র শরীর তার জন্য আশীর্বাদ হিসেবে ধরা দিয়েছে যা তাকে অন্য শিশুদের তুলনায় বেশি আরোহণে সহায়তা করেছে। কিন্তু তাবেইর মনে হলো, পাহাড়ে ওঠা বেশ মজার হলেও এর জন্য খুবই কম প্রতিযোগিতা করতে হয় । ১৯৭৫ সালের মধ্যে কয়েকটি পর্বত আরোহণ শেষ করেই তিনি মাউন্ট এভারেস্টের প্রতি মনোযোগ দেন। তৎকালীন জাপানের নিহান টিভি এবং ইউমিউরি পত্রিকা একদল মহিলাকে এভারেস্ট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তাবেই এ সুযোগটি কাজে লাগান। হাজার হাজার মহিলার মধ্যে প্রতিযোগিতা করে নিজেকে ১৫ জনের দলে অন্তর্ভুক্ত করতে সমর্থ হন। এরপর শুরু হয় কঠোর প্রশিক্ষণের পালা। প্রশিক্ষণ শেষে কাঠমান্ডু থেকে তাদের অভিযান শুরু হয়। ৯ জন শেরপা গাইড (শেরপারা হিমালয় অঞ্চলের আদি বাসিন্দা, যারা পর্বত আরোহীদের সহায়তা করেন) এর সহায়তায় তারা অভিযানে যোগ দেন।
অভিযান শুরুর কিছুদিন পরই সব আরোহী ও তাদের সহযোগীরা বরফের নিচে চাপা পড়েন। তাবেই নিজেও কিছুক্ষণ অজ্ঞান ছিলেন। পরে একজন শেরপা তাকে উদ্ধার করেন।
নিরলস অধ্যবসায়ী এই মহিলা বরফে চাপা পড়ার ১২ দিন পর এভারেস্টের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহণ করেন। পর্বতারোহণের তীব্র আকাক্সক্ষাই তাকে পৃথিবীর প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী নারীর আসনে নিয়ে এসেছে। এভারেস্ট বিজয়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় তাবেই বলেন, এভারেস্ট বিজয় আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমার সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করতে হবে তাও সে শিখিয়েছে। আসলে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার নামই জীবন। তাবেই ১৯৬২ সালে সোয়া উইমেন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স সম্পন্ন করেন। এর পরপরই তিনি পর্বত আরোহণকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে মহিলাদের জন্য জাপানে লেডিস ক্লাইম্বিং ক্লাব (এলসিসি) গঠন করেন। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৯,০২৯ ফুট উঁচু। তাবেইর আগে তখনো কোনো নারী এই সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আরোহণ করতে পারেনি।
-আনোয়ার হোসেন
জানকো তাবেই
Info Post
0 comments:
Post a Comment