সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ চট্টগ্রামের ষোলশহরে ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সৈয়দ আহমদউল্লাহ ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী। মা নাসিমা আরা খাতুনও একই ধরনের উচ্চশিক্ষিত ও রুচিশীল পরিবার থেকে এসেছিলেন। আট বছরের সময় তার মাতৃবিয়োগ ঘটে। কুড়িগ্রাম হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ১৯৪৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিসটিংশনসহ বিএ পাস করেন। ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন পিতৃবিয়োগ ঘটে। তখন তিনি অর্থনীতিতে এমএ পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত আর পড়েননি। 'দ্য স্টেটসম্যান'-এ সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। 'কনটেম্পোরারি' নামে একটি ত্রৈমাসিক বের করেন। 'কমরেড পাবলিশার্স' নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা খোলেন। ১৯৪৭ সালে 'দ্য স্টেটসম্যান'-এর চাকরি ছেড়ে দিয়ে রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের সহকারী বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৯ সালে লালসালু কমরেড পাবলিশার্স কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এরপর করাচিতে রেডিও পাকিস্তানে বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫১ সালের ৫ মে নয়াদিলি্লতে পাক দূতাবাসের তৃতীয় সেক্রেটারির মর্যাদায় প্রেস এটাশে হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রেস এটাশে হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে তথ্য অফিসার হিসেবে ঢাকা আঞ্চলিক তথ্য অফিসে বদলি হন। ১৯৬১-এর এপ্রিলে প্রেস এটাশে হিসেবে ফ্রান্সের প্যারিসে পাকিস্তানি দূতাবাসে যোগ দেন। এ সময় ' লালসালু'র ফরাসি অনুবাদ 'লারব্র সাঁ রাসিন্' অর্থাৎ 'শিকড়হীন গাছ' প্রকাশিত হয়। এরপর লালসালুর ইংরেজি অনুবাদ 'ঞৎবব রিঃযড়ঁঃ জড়ড়ঃং' নামে লেখক লন্ডনের 'শ্যাটো অ্যান্ড উইন্ডাস' প্রকাশনালয় থেকে বের করেন। ১৯৭০-এর ৩১ ডিসেম্বর ইউনেস্কোয় তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। পাকিস্তান সরকার ইসলামাবাদে বদলি হওয়ার প্রস্তাব দেয়, কিন্তু তিনি রাজি হননি। ফ্রান্সের প্যারিস শহরে থেকে যান। ঊনসত্তরের পর থেকে রাজনৈতিক সংকটের কারণে ইসলামাবাদে ফেরত আসতে বললেও আর ফিরেননি। তার মাসুল তাকে দিতে হয়েছিল। ২২ বছরের সরকারি চাকরি শেষে প্রাপ্য কোনো সুবিধা পাননি। শেষ জীবনে বড় আর্থিক সংকটে কেটেছিল। তিনি ১৯৫৫ সালের ৩ অক্টোবর বিয়ে করেন ফরাসি এক মেয়েকে। তার স্ত্রীর নাম ছিল আন-মারি লুই রোজিতা মার্সেল তিবো। পরে তার স্ত্রী নাম পাল্টে রাখেন আজিজা মোসাম্মৎ নাসরিন। তাদের দুই সন্তান : কন্যা সিমিন ওয়ালীউল্লাহ এবং পুত্র ইরাজ ওয়ালীউল্লাহ।
দীর্ঘকাল সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন দেশের বাইরে কিন্তু তার রচনার কেন্দ্র থেকে গেছে বাংলাদেশের গ্রামে। তার গন্ধ-উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে সাধারণ মানুষের কথা। তিনি কথাসাহিত্যের নতুন রীতির সূত্রধর। চেতনাপ্রবাহ রীতি ছোটগল্পে, উপন্যাসে অস্তিত্ববাদের প্রয়োগ এবং নাটকে অজ্ঞাত সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। ১৯৫৫ সালে 'বহিপীর' নাটকের জন্য পিইএন পুরস্কার পান, ১৯৬১ সালে উপন্যাসের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। ১৯৬৫ সালে আদমজী পুরস্কার পান 'দুই তীর ও অন্যান্য গল্প' গ্রন্থের জন্য। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর গভীর রাতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে পারি শহরের উপকণ্ঠে নিজ ফ্লাটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।
-জগদীশ দাশ
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
Info Post
0 comments:
Post a Comment