Breaking News
Loading...
Tuesday, October 19, 2010

মানুষ পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন বিষয় জানার মধ্য দিয়ে বড় হয়, তাঁদের সমর্থন পায় যা অন্য প্রাণীরা পায় না। এ কথাটি জেন গুডঅলের। এই ব্রিটিশ, শিম্পাঞ্জি বিশেষজ্ঞ কাজ করেন প্রাণীর অধিকার নিয়ে।

শৈশবের অভিজ্ঞতা

জেন গুডঅলের জন্ম ১৯৩৪ সালের ৩ এপ্রিল। সুন্দর একটি পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন তিনি। মা ভান এবং নানি ড্যানি'র অনেক কিছুই প্রভাবিত করেছে তাঁকে। পরিবারই জেনকে আত্মবিশ্বাসী হতে শিখিয়েছে। শিখিয়েছে সততা, সমবেদনা এবং অন্যদের সম্মান করার মতো মূল্যবোধগুলো। বাবা মর্টিমার গুডঅল থাকতেন সিঙ্গাপুরে। জেন যখন অনেক ছোটো সে সময় বাবা তাঁকে একটি খেলনা শিম্পাঞ্জি উপহার দিয়েছিলেন। এর নাম জুবিলি, যা এখনো যত্ন করে রেখে দিয়েছেন তিনি।

জেন ছোটো থাকতেই তাঁর বাবা-মা'র বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তারপর থেকে তিনি তাঁর মায়ের সঙ্গে নানির বাড়িতে থাকতেন। সেখানে তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের প্রাণী পুষতো। ছোটো থেকেই তিনি এসব প্রাণীর সঙ্গে খেলা করতে এবং এদের যত্ন নিতে পছন্দ করতেন। ভালবাসতেন সাগরতীরে একাকী বসে থাকতে। যেখানে তিনি পোষা প্রাণীগুলোর সঙ্গে সময় কাটাতেন। গাছে চড়তে এবং সেখানে বসে বই পড়তেও পছন্দ করতেন তিনি। তিনি স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে ভ্রমণে বের হবেন এবং জীবজন্তুর সঙ্গে সময় কাটাবেন। তাঁর সেই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়। জেন বলেন, ''শিম্পাঞ্জি নিয়ে গবেষণার জন্য এক সময় তিনশত দিনই আমাকে ভ্রমণ করতে হয়েছে।

শিম্পাঞ্জি নিয়ে গবেষণা

জেনের বয়স যখন ২৩ বছর, তিনি প্রথমবারের মতো ভ্রমণে যান। সে সময় তিনি কেনিয়াতে প্রত্নতত্ত্ববিদ লুইস লিকি'র সঙ্গে দেখা করেছিলেন। জেনের আন্তরিকতা ও বিচারবুদ্ধিতে মুগ্ধ হয়ে শিম্পাঞ্জি নিয়ে একটি গবেষণা করার জন্য তাঁকে নির্বাচন করলেন লিকি। সেটা ছিল ১৯৬০ সাল? গবেষণাটি করার জন্য মা'কে সঙ্গে নিয়ে তানজানিয়ায় চলে গেলেন জেন। সেখানে চারমাস তাঁবুতে থাকতে হয়েছিলো তাঁদের। সেসময় বনে মোষের দৌড়াদড়ির শব্দ এবং রাতে চিতাবাঘের ডাক শুনতেন। তাঁরা দেখতেন গোখরো সাপের মতো প্রাণঘাতী প্রাণীদের।

লিকি তাকে বলেছিলেন, তিনি যদি শান্ত থাকেন এবং এসব প্রাণীদের কোনো ক্ষতি না করেন তাহলে এরাও তাঁর কোনো ক্ষতি করবে না। জেন পাহাড়ের চূড়ায় উঠে নিচের চমৎকার উপত্যকা এবং হ্রদের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। শিম্পাঞ্জিদের দেখার জন্য বসে থাকতেন সেখানে। ধীরে ধীরে শিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে দেখা মেলে তাঁর। প্রথম যে শিম্পাঞ্জিটি তার কাছে এসেছিলো সেটি ছিলো পুরুষ। তিনি ওটার নাম দিয়েছিলেন ডেভিড গ্রেবেয়ার্ড। জেন বলেন, ''অন্য শিম্পাঞ্জিরা ভয়ে দৌড়ে পালালেও সাদা লোমে মুখ ঢাকা ডেভিড ভয় পায় না। সে এগিয়ে আসে, আমার পাশে বসে।"

সংসার জীবন

জেন ১৯৬৫ সালে নৃতত্ত্বে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এর আগে ১৯৬৪ সালে তিনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ফটোগ্রাফার হুগো ফান লাভিক'কে বিয়ে করেন। ১৯৬৭ সালে তাঁদের সন্তান এরিক লুইসের জন্ম হয়। এর কয়েক বছর পরেই লাভিকের সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন জেন। নিজেকে প্রশ্ন করেন জীবনের মানে কী? আবার নিজেই প্রেরণা যোগান নিজেকে।

১৯৬৫ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক শিম্পাঞ্জির ওপর তার গবেষণাটি নিয়ে টিভিতে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখায়। তখন থেকেই খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে জেনের। ১৯৭৫ সালে তানজানিয়ার ন্যাশনাল পার্কের পরিচালক ডেরেক ব্রাইসেসন'কে তিনি বিয়ে করেন? কিন্তু ১৯৭৯ সালেই ক্যানসারে মারা যান ডেরেক। সেসময়টা ছিলো জেনের সবচেয়ে খারাপ সময়। স্বামী মারা যাওয়ার কয়েকমাস আগেই তাঁরা দু'জন চলে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে? এরপর তিক্ত অভিজ্ঞতা ও জীবনের প্রতি ক্ষোভ নিয়ে তিনি আবার ফিরে আসেন আফ্রিকাতে। পরে শান্তি খুঁজে পান শিম্পাঞ্জিদের কথা ভেবে, ওদের প্রকৃতির হরেক রকমের বিরূপতার মাঝেও বেঁচে থাকার লড়াই দেখে। জেন বিশ্বাস করেন, প্রকৃতিই একসময় মনের সব কষ্ট হালকা করে দেয়।

0 comments:

Post a Comment