Breaking News
Loading...
Friday, October 22, 2010

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ১৮৯০ সালের ২৬ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০৭ সালে মতিলাল শীল ফ্রি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ১৯০৯ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এফএ, ১৯১৭ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ এবং ১৯১৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৩ সালে তিনি বিদ্যাসাগর কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯১৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষার অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে ১৯১৯ সালে তিনি লন্ডনে যান এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোনোটিক্সে ডিপেস্নামা ও ডি-লিট ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিলো অরিজিন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অব বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ। লন্ডনে তিনি ধ্বনিতত্ত্ব, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাতত্ত্ব এবং প্রাকৃত, ফারসি, প্রাচীন আইরিস, গোথিক ইত্যাদি ভাষা শেখেন। এখান থেকে তিনি প্যারিস যান এবং সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় আর্য ভাষাতত্ত্ব, সস্নাভ ও ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাতত্ত্ব, গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষা ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করেন। ১৯২২ সালে দেশে ফিরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ত্রিশ বছর কর্মরত থাকার পর তিনি ইমেরিটাস প্রফেসর পদে পুনঃনিয়োগ লাভ করেন এবং ১৯৬৩ সালে ভারতের জাতীয় অধ্যাপক হন। তিনি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মালয়, সুমাত্রা, জাভা, বালি ও শ্যামদেশ ভ্রমণ করেন। এসকল স্থানে তিনি ভারতীয় শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে বক্তৃতা দেন। এছাড়া তিনি এশিয়া, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ভাষাতাত্তি্বক সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৩৩ সালে সুনীতিকুমার কলকাতা রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি হল্যান্ডের সোসাইটি অব আর্টস-এর সদস্য (১৯৫০) এবং অসলোর নরওয়েজিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সের অনারারি সদস্য (১৯৫৫) ছিলেন। তিনি ১৯৫৮ সালে সোভিয়েত একাডেমি অব সায়েন্স কতর্ৃক আমন্ত্রিত হয়ে সস্নাভ জাতির ওপর ভাষণ দেন। ১৯৬০ সালে তিনি মস্কোর প্রাচ্যবিদ্যা সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি সাহিত্য একাডেমির সভাপতি ও ইউনেস্কোর ভাষা বিষয়ক সংবাদদাতা ছিলেন। ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে সুনীতিকুমার ৩৮০টির অধিক গ্রন্থ রচনা করেন।



তার বিখ্যাত রচনা হলো 'ওরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অব দি বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ। এ পুস্তকটির জন্য রবীন্দ্রনাথ তাকে 'ভাষাচার্য' উপাধিতে ভূষিত করেন। তার অন্যান্য উলেস্নখযোগ্য গ্রন্থ হলো_বেঙ্গল পনেটিক রিডার, বাংলা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা, পশ্চিমের যাত্রী, ভারতের ভাষা ও ভাষা সমস্যা, ভারত সংস্কৃতি, সংস্কৃতি কী, দ্বীপময় ভারত ও শ্যামদেশ ইত্যাদি। ভাষাতত্ত্ব ও সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য সুনীতিকুমারকে এলাহাবাদ হিন্দু সাহিত্য সম্মেলন ১৯৪৮ সালে 'সাহিত্য বাচস্পতি' উপাধিতে ভূষিত করে। এছাড়া ১৯৬৩ সালে ভারত সরকার তাকে 'পদ্মভূষণ' উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৭ সালের ২৯ মে কলকাতায় সুনীতিকুমার মৃতু্যবরণ করেন।

0 comments:

Post a Comment