Breaking News
Loading...
Saturday, October 23, 2010

মেয়েদের নাচ-গানের প্রতিকূল সময়ে তিনি নিজেকে জড়িয়েছিলেন নাচের সঙ্গে। সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের চোখরাঙানিকে তুচ্ছ করে মনেপ্রাণে ভালোবেসে গেছেন এই শিল্পটিকে। আজ নাচের সঙ্গে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পার করে এসেও নাচ নিয়ে তার স্বপ্ন দেখার শেষ নেই। তিনি রাহিজা খানম ঝুনু।

১৯২১ জুন পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন রাহিজা খানম ঝুনু। ১৯৫৫ সাল, ঝুনু তখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। প্রধান শিক্ষিকা বাসন্তী গুহঠাকুরতা ঠিক করেন ছাত্রীদের দিয়ে একটি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করাবেন। 'ঘুমন্ত রাজকন্যা' নামের সেই নৃত্যনাট্যের বিভিন্ন চরিত্রের জন্য মেয়েদের বাছাই করা হলো। কিন্তু বিপত্তি বাধল একটি পুরুষ চরিত্র নিয়ে। মেয়ে হয়ে পুরুষ চরিত্র করতে সবাই নারাজ। সাহস করে এগিয়ে এলেন ঝুনু। রাখালের পুরুষ চরিত্রটি দিয়েই বাজিমাত করলেন তিনি। দর্শকরা নাটক পছন্দ করল। তার চেয়েও বেশি পছন্দ করল রাখাল চরিত্রটিকে। বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর শিক্ষক অজিত সান্যাল তার নাচ দেখে নিজেই উৎসাহ দেখালেন তাকে নাচ শেখানোর। বললেন, 'নাচ শিখলে বাফায় ভর্তি হয়ে যাও, আমি তোমাকে ফ্রি শেখাব।' কিন্তু সেবার রাহিজা খানম ঝুনুর বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে ভর্তি হওয়া হয়নি।

১৯৫৭ সালে বাফার আয়োজনে 'চণ্ডালিকা' নৃত্যনাট্যে ঝুনুর চরিত্রটি ছিল চুড়িওয়ালার। চণ্ডালকন্যা প্রকৃতি সেজেছিলেন অঞ্জলি আর মা সেজেছিলেন মেহের আহমেদ। বৌদ্ধভিক্ষু আনন্দ হয়েছিলেন মন্দিরা নন্দী। আর দুধওয়ালার ভূমিকায় রূপ দেন শাহিদা আলতামাস। ১৯৫৮ সালে অজিত সান্যাল ভারত চলে যান। ওই বছরই ঢাকায় আসেন বোম্বে লিটল ব্যালে ট্রুপের সদস্য জিএ মান্নান। বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে নৃত্যশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। কবি জসীমউদ্দীনের বিখ্যাত কাব্য উপন্যাস নকশী কাঁথার মাঠকে নৃত্যনাট্য হিসেবে মঞ্চায়ন করার পরিকল্পনা নেন মান্নান। এই নৃত্যনাট্যের কেন্দ ীয় ভূমিকা রূপাই চরিত্রে রূপ দেন জিএ মান্নান নিজেই। আর সাজু চরিত্রে নৃত্যাভিনয় করেন রাহিজা খানম ঝুনু। অবিস্মরণীয় এক মঞ্চায়ন ছিল সেটি। ১৯৬১ সালে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমী থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্সে উত্তীর্ণ হন এবং শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী হিসেবে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ওই বছরই তিনি বাফার নৃত্যকলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তারপর দীর্ঘদিন বাফার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশের খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে লায়লা হাসান, জিনাত বরকত উল্লাহ, কাজল ইব্রাহীম, লুবনা মারিয়াম, শামীম আরা নীপা, তারানা হালিম, দীপা খন্দকার, সোহেল রহমান, কবিরুল ইসলাম রতন, আবদুর রশিদ স্বপন, আনিসুল ইসলাম হিরুসহ অনেকে তার ছাত্র। তিনি পরিচালনা করেন নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা, মায়ার খেলা, শ্যামা, অরুণাচলের পথে, উত্তরণের দেশে, দি মেলোডি, দেখব এবার জগৎটাকে, সৃজন ছন্দে, জলকে চল, সুর ও ছন্দ, সোনালি আঁশ এবং ঝুমুর ঝংকার। রাহিজা খানম কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬১ : বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর নৃত্যকলা বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বর এবং শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী হিসেবে স্বর্ণপদক, একুশে পদক, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী পদক, বাংলা একাডেমীর সম্মানসূচক ফেলোশিপ অর্জন করেন। 'নৃত্যশিল্প' ও 'নৃত্যের রূপরেখা' নামে তার দুটো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।



-শেখ মেহেদী হাসান

0 comments:

Post a Comment