বিশষ্টি মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক মীর শওকত আলী ১৯৩৮ সালের ১১ জানুয়ারি পুরনো ঢাকায় নাজিরা বাজারে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পরেই তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন।
১৯৫৫ সালে সেনাবাহীতে পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। ১৮৫৮ সালে তিনি গ্রাজুয়েট ডিগ্রী লাভ করেন।
একই সময়ে তিনি সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্তও হন। তিনি ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন রেজিমেন্টে অ্যাডজুটেন্ট, কোয়াটার মাস্টার, কোম্পানি কমান্ডারসহ সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীতে কাজ করেন।
মীর শওকত আলী ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে কোয়েটা স্টাফ কলেজ থেকে চট্টগ্রামের ষোল শহরে ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে পোস্টিং দিয়ে পাঠানো হয়।
কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের আম্রকাননে ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণার পর মীর শওকতকে ৫ নং সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়।
স্বাধীনতার পর মীর শওকত আলী সেনাবাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭২-৭৪ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে অন্যান্য ব্রিগেডেরও কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৪ সালে কায়রোতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দলের সফরে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেন মীর শওকত। ১৯৭৫ সালে তিনি সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ নিযুক্ত হন। ১৯৭৫-৭৭ সালে তিনি পুরনো ঢাকা উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি ঢাকা অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮০ সালে তিনি সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার পদে নিয়োগ পান। একবছর এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মিশর, সুদান, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্ব পালন করেন। চাকুরিকালীন তিনি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরশাদ সরকারের সময়ই ১৯৮১ সালের ৯ জুন তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৯১ সালে ঢাকার লালবাগ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি প্রথমে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে শ্রম ও কর্মসংস্থা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
মীর শওকত বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ক্রীড়া ও কৃষিখাতে অবদান রাখার জন্য তিনি দু'বার রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকে ভূষিত হন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার লে. জেনারেল মীর শওকত বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ‘সেক্টর কমান্ডার ফোরাম'র ভাইস-চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মীর শওকত আলী ৩ খণ্ডে নিজের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ইভিডেন্স' লিখেছেন। মীর শওকত আলী'র স্ত্রীর নাম বেগম তাহমিনা শওকত তার তিন কন্যা।
তিনি ২০১০ সনের ২০ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।
মীর শওকত আলী
Info Post
0 comments:
Post a Comment