স্রষ্টার সবচেয়ে রহস্যময় সৃষ্টি হলো মানুষ। সেই মানুষ যখন বাক, শ্রবণ এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও পৃথিবী বিখ্যাত হন, তখন তিনি শুধু স্রষ্টার রহস্যময় সৃষ্টিই নন, হয়ে ওঠেন সম্মানীয় এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তেমনি একজন হলেন হেলেন কিলার। ১৮৮০ সালের ২৭ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা তাসকাম্বিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এ মহীয়সী নারী।
বাবার নাম আর্থার কিলার এবং মা ক্যাটি অ্যাডামস কিলার। দেড় বছর বয়সে হেলেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা-মা প্রাণপ্রিয় কন্যার বাঁচার আশা-ভরসা ছেড়ে দিলেও ভেঙে পড়েননি, চিকিৎসা করান। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন। কিন্তু কথা বলা, শোনা এবং দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। আলোহীন আর নিস্তব্ধতায় ছেয়ে যায় তার জীবন। শিশুকাল থেকেই হেলেন কিলার একাধারে বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে বেড়ে ওঠেন। মাত্র ৮ বছর বয়সেই হেলেন হাতের আঙ্গুল দিয়ে দাগ কেটে লেখা, ব্রেইলি পদ্ধতিতে লেখাপড়াসহ শব্দ ও বাক্য উচ্চারণ শিখে ফেলেন। ১৪ বছর বয়সে হেলেন আমেরিকার নিউ ইয়র্কের 'রাইট হুমাসন' স্কুলে ভর্তি হন। এখানে বিশ্ববিখ্যাত লেখক মার্ক টোয়েনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ১৯০৪ সালে হেলেন র্যাডক্লিফ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন। নিজের প্রতিবন্ধকতার কথা উপলব্ধি করে তিনি বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের জন্য গড়ে তোলেন নতুন নতুন স্কুল এবং সমিতি। হেলেন কিলারের রচিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১১টি। এছাড়াও বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তৈরি করেছেন একটি চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রে তার নিজের ভূমিকায় নিজেই অভিনয় করেছেন। ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের অনুরোধে তিনি বিভিন্ন হাসপাতালে যুদ্ধাহত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিক ও সৈনিকদের কাছে যেতেন এবং শান্তি ও আশার বাণী শোনাতেন। ১৯৫৯ সালে হেলেন কিলার জাতিসংঘ কর্তৃক বিশেষ সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৬৮ সালের ১ জুন এ মহীয়সী নারী পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমান স্বর্গলোকে। এ মহান নারীকে চির অম্লান করে রাখার জন্য ১৯৭৭ সালে গঠন করা হয় 'আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দি ওভারসিজ ব্লাইন্ড'। এ মহীয়সী নারীর জীবনের দিকে লক্ষ্য করলে মনে হয় পৃথিবীতে অসম্ভব কাজ বলতে কিছু নেই।
-মহীয়সী
হেলেন কিলার
Info Post
0 comments:
Post a Comment