Breaking News
Loading...
Friday, December 17, 2010

উম্মুল মুমেনীন হযরত উম্মে সালমার (রা.) নবীজীর পবিত্র স্ত্রীদের মধ্যে মর্যাদা ও পরিপূর্ণতার বিচারে হযরত আয়েশার পরই স্থান ছিল। উম্মে সালমা রূপ-সৌন্দর্য, জ্ঞান-প্রজ্ঞার পরিপূর্ণতা এবং সুস্থ চিন্তার গুণে বিভূষিতা ছিলেন। পিতা আবু উমাইয়া ছিলেন কোরাইশের অত্যন্ত মর্যাদাবান এবং পরিচিত ব্যক্তিত্ব। মক্কার দানশীল ব্যক্তিদের মধ্যে তার বিশেষ স্থান ছিল। পিতার ন্যায় তিনি নিজেও অত্যন্ত দানশীল ছিলেন, আর অন্যদেরকেও এ জন্য উৎসাহিত করতেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণ করবেন কি করবেন না, এ বিষয়ে মানুষ যখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে নিমজ্জিত ছিল, ইসলাম সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া ছিল যখন ভাগ্যবান ব্যক্তিদের কাজ, তখন তারা স্বামী-স্ত্রী অর্থাৎ তিনি এবং তার প্রথম স্বামী আবু সালমা ইবনে আবদুল আসাদ উভয়ই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে প্রবেশ করে ধন্য হন। হযরত আবু সালমার (রা.) ইন্তিকালের পর হযরত আবু বকর (রা.) এবং পরে ওমর (রা.) তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি এতে সম্মত হননি। কিন্তু আল- এছহাব গ্রন্থের রচায়তা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানীর মতে হযরত ওমর নিজের জন্য এ প্রস্তাব দেননি বরং তার মাধ্যমে নবীজী (স.) তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব পাঠান। হিজরী চতুর্থ সালে শাওয়াল মাসের শেষের দিকে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। হযরত উম্মে সালমা বিয়ের দিনই নিজ হাতে খানা তৈরি করেন। নবীজী এবং তার নবপরিণীতা স্ত্রী বাসর রাত্রে এ খাদ্যই গ্রহণ করেন। নবীজীর ঔরসে তার কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি। প্রাপ্ত তথ্য মতে, তিনি দুই পুত্র এবং দুই কন্যা সন্তানের মা ছিলেন।

হযরত উম্মে সালমার গোটা জীবনটাই ছিল একজন দুনিয়াত্যাগীর জীবন। দুনিয়ার ধন-দৌতলের প্রতি তার কোন মোহ ছিল না। একবার তিনি একটি হার গলায় দেন। এতে কিছু স্বর্ণও ছিল। নবীজী আপত্তি করলে খুলে ফেলেন। প্রত্যেক মাসে সোমবার, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার রোযা রাখতেন। প্রথম পক্ষের সন্তান সাথে ছিল। অতি আদর-যত্নের সাথে তাদের লালন-পালন করতেন।

হযরত উম্মে সালমা (রা.) এর মধ্যে আত্মমর্যাদা বোধ ছিল। নবীজী ইন্তেকালের পূর্বে হযরত ফাতেমার কানে কানে যে কথা বলেন, হযরত আয়েশার মতো বহুগুণের অধিকারিণী স্ত্রীও অস্থির হয়ে তখনই হযরত ফাতেমাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু হযরত উম্মে সালমা অস্থির হয়ে তখনই এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস না করে বরং অপেক্ষা করেন এবং নবীজীর ওফাতের পর জিজ্ঞেস করেন।

হোদায়বিয়ার সন্ধির পর রাসুলে (স.) হোদায়বিয়ায় কোরবানী করার জন্য বলেন। কিন্তু সন্ধির শর্তাবলী মুসলমানদের বিরুদ্ধে হওয়ায় মুসলমানদের মধ্যে একটা হতাশা বিরাজ করছিল। নবীজী তিনবার নির্দেশ দেওয়ার পরও কেউ নির্দেশ মানতে এগিয়ে আসেননি। ঘরে ফিরে তিনি উম্মে সালমার কাছে সব খুলে বলেন। উম্মে সালমা সব শুনে বলেন, আপনি কাউকে কিছু না বলে বাইরে গিয়ে নিজেই কোরবানী করুন এবং এহরাম ভাঙ্গার জন্য মাথা মোড়ান। নবীজী তাই করলেন। অতঃপর সকালে কোরবানী করলেন এবং এহরাম খুলে ফেললেন। আর হযরত উম্মে সালমার এ অভিমত যথার্থ বলে সকলে স্বীকার করেন।

হযরত উম্মে সালমার কাছ থেকে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার পরিমাণ তিনশ আটাত্তরটি। তার মধ্যে হাদীস শোনার খুব আগ্রহ ছিল। নবীজীর স্ত্রীদের সকলেরই বেশী পরিমাণ হাদীস স্মরণ ছিল। কিন্তু হযরত আয়েশা এবং হযরত উম্মে সালমার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না।

বিদায় হজ্বের সময় হযরত উম্মে সালমা অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু তাই বলে দ্বীনী ফরয আদায় থেকে বিরত থাকা তার পছন্দ ছিল না। তাই তিনি নবীজীর সাথে আগমন করেন। হযরত উম্মে সালমার অন্তরে ছিল ইসলামের জন্য প্রগাঢ় দরদ। আলস্নাহর নির্দেশ মেনে চলা তিনি ফরজ মনে করতেন।

উম্মুল মুমেনীন হযরত উম্মে সালমা (রা.) হিজরী ৬৩ সালে ৮৪ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেন। হযরত আবু হোরায়রা তার জানাজার নামাজ পড়ান। তার সম্পর্কে হযরত আলস্নামা ইবনুল কাইয়্যেম বলেন, হযরত উম্মে সালমার ফতোয়াগুলো সংকলিত হলে একটা ছোট বই হতে পারে। ইমামুল হারামাইন বলেন, নারীদের মধ্যে আয়শা (রা.) এর পর হযরত উম্মে সালমার চেয়ে বেশী সুস্থ মতের আর কাউকে দেখিনি।

তাই উম্মুল মুমেনীন হিসেবে ইসলামের ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। আলস্নাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন, আমীন।

-আবু নেসার শাহীন

0 comments:

Post a Comment