মির্জা মুহম্মদ আলিবর্দী খাঁ ১৭৪০-১৭৫৬ সাল পর্যন্ত বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব ছিলেন। বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ্দৌলার নানা বলেই তার সমধিক খ্যাতি। আলিবর্দীর বাবা জাতিতে আরবি এবং মা তুর্কি। তিনি শিয়া মতাবলম্বী ছিলেন। পারস্য দেশের এই সামান্য সৈনিক ভাগ্যান্বেষণে হিন্দুস্থানে এসেছিলেন। দিলি্লতে অবস্থানকালে কোনো সুযোগ করতে না পেরে তখনকার উড়িষ্যার ডেপুটি গভর্নর মুর্শিদকুলী খাঁর জামাতা সুজাউদ্দিনের কাছে উপস্থিত হন। মাসিক একশ টাকা বেতনের চাকরি জোটে। ক্রমেই বুদ্ধিবলে ও যোগ্যতা গুণে সুজাউদ্দিনের দরবারে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তার বড় ভাই হাজি আহমদও দিলি্ল থেকে উড়িষ্যায় এলেন। দুই ভাই সুজাউদ্দিনের রাজকার্য ব্যাপারে সাহায্য করতে লাগলেন। এদের ছাড়া সুজাউদ্দিনের চলে না। নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর মৃত্যুর পর (১৭২৭ সাল) জামাতা সুজাউদ্দিন আলিবর্দী ও হাজি আহম্মদের কূটবুদ্ধির সহায়তায় বিনা রক্তপাতে নবাবী লাভ করেন।
সুজাউদ্দিন ছেলে সরফরাজকে বিহারের ডেপুটি গভর্নর করে পাঠাতে চাইলেন। কিন্তু বেগম জিনতউনি্নসা এ প্রস্তাব অগ্রাহ্য করলেন। তখন বিহারের সুবেদারী পেলেন আলিবর্দী খাঁ। আর হাজি আহম্মদ থেকে গেলেন মুর্শিদাবাদে প্রধানমন্ত্রী হয়ে। ১৭৩৯ সালে সুজাউদ্দিনের মৃত্যুর পর নবাব হলেন সরফরাজ খাঁ। কিন্তু বিহারের সুবেদার আলিবর্দী খাঁর তখন অপরিসীম শক্তি। অমাত্যবর্গও তাকে বাংলা বিহার উড়িষ্যার অধিপতি হিসাবে পেতে আগ্রহী। অবশেষে ১৭৪০ সালের ৯ এপ্রিল মুর্শিদাবাদের অদূরে গিরিয়ার মাঠে আলিবর্দীর সঙ্গে সরফরাজ খাঁর যুদ্ধ হলো। যুদ্ধে সরফরাজ খাঁ পরাজিত ও নিহত হলেন। দিলি্লর বাদশাহ মুহম্মদ শাকে চুরাশি লাখ টাকা দিয়ে আলিবর্দী খাঁ বাংলা বিহার উড়িষ্যার সুবেদারী পরোয়ানা পেলেন।
আলিবর্দী খাঁ একজন সুদক্ষ শাসক। তিনি কঠোরহস্তে বাংলায় বর্গির আক্রমণ প্রতিরোধ করেন এবং বর্গিপ্রধান ভাস্কর পণ্ডিতসহ তেইশজন নেতাকে কৌশলে হত্যা করেন। ইউরোপীয় বণিকদের প্রতি তিনি সবিশেষ কৌশল অবলম্বন করে তাদের প্রাধান্যকে সঙ্কুচিত করে রেখেছিলেন।
আলিবর্দী খাঁ চরিত্রবান এবং ধর্মভীরু ছিলেন। তিনি জীবনে মদ স্পর্শ করেননি। একমাত্র বেগম শরফুন্নেসার প্রতি তিনি অনুরক্ত এবং নির্ভরশীল ছিলেন। আলিবর্দীর কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। তার তিনটি কন্যা : (১) ঘসেটী বেগম (মেহেরউনসেনা) (২) শাহ বেগম (৩) আমিনা বেগম। ওই তিন কন্যার সঙ্গে তার বড় ভাই হাজি মোহাম্মদের তিন পুত্রের (১) ওয়াজিশ মোহাম্মদ (২) সৈয়দ আহমদ (৩) জয়েনউদ্দিন আহমেদের যথাক্রমে বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। আশি বছর বয়সে বৃদ্ধ নবাব আলিবর্দী খাঁ উদরী রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল ভোর পাঁচটায় পবিত্র কলেমা পাঠ করতে করতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আলিবর্দীর মৃত্যুর পর ১৫ এপ্রিল তার কনিষ্ঠ কন্যা আমিনা বেগমের জ্যেষ্ঠপুত্র সিরাজ-উদ্দৌলা বাংলা বিহার উড়িষ্যার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।
নানা আলিবর্দী সিরাজ-উদ্দৌলাকে প্রথমাবধি খুব আদর করতেন। সিরাজ-উদ্দৌলার জন্মের পর থেকেই তার ভাগ্যের এবং প্রতিষ্ঠার প্রভূত উন্নতি হয়েছে এ কথা আলিবর্দী গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন। মৃত্যুর পূর্বে নবাব আলিবর্দীর ইচ্ছানুসারে ভবিষ্যৎ নবাব সিরাজ-উদ্দৌলা পবিত্র কোরআন স্পর্শ করে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি মদ পান করবেন না। সিরাজ-উদ্দৌলা আমৃত্যু এ অঙ্গীকার রক্ষা করেছিলেন।
গ্রন্থনা : তাহমীদুল ইসলাম
মির্জা মুহম্মদ আলিবর্দী খাঁ
Info Post
0 comments:
Post a Comment
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.