Breaking News
Loading...
Wednesday, March 2, 2011

আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক। টেলিফোনের অন্যতম আবিষ্কারক হিসেবে তিনি সবচেয়ে পরিচিত। তিনি ৩ মার্চ ১৮৪৭ সনে স্কটল্যান্ডের এডেনবার্গে জন্মগ্রহন করেন।

তার বাবা মেলভিলে বেল বধিরদেরকে শব্দ করা বা কথা বলার জন্য কীভাবে গলা, জিহ্বা আর ঠোঁট ব্যবহার করতে হয় তার শিক্ষা দিতেন। মা এলিসা গ্রেস সাইমন্ডস ছিলেন গায়িকা ও চিত্রশিল্পী। বেল মার কাছে পিয়ানো শিখতেন। তাই গ্রাহাম বেলের স্বপ্ন ছিল পিয়ানো বাদক হবেন। মা'ও তাকে বিশ্ব সঙ্গীত সম্পর্কে উৎসাহ দিতেন। কিন্তু মার মৃত্যুতে তার সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি।

বধিরদের সুস্পষ্টভাবে কথা বলা শেখানো ছিল তাদের পারিবারিক পেশা। পরিবারের সব সদস্যই এ পেশায় ছিল সুদক্ষ। গ্রাহাম বেল ছিলেন প্রকৃতি প্রেমিক। পশু-পাখি তিনি খুব ভালবাসতেন। মাটিতে ঘাষের ওপর শুয়ে আকাশ আর পাখিকে মনোযোগ দিয়ে দেখতেন। তিনি বাড়িতে মায়ের কাছেই প্রাথমিক পড়াশোনা করেছেন। পরে এডেনবার্গের রয়েল হাই স্কুলে ভর্তি হন। তিনি বিজ্ঞান ভালবাসতেন_ উদ্ভিদবিদ্যা থেকে কারিগরি বিদ্যা। তাছাড়া বক্তৃতা শোনা, নাটক আর গানের প্রতি আকর্ষণ ছিল। পরে 'ইউনিভার্সিটি অফ এডেনবার্গ' এ বক্তৃতা ও সঙ্গীত বিষয়ে পড়াশোনা করেন। এর আগে বাবা তাকে বক্তৃতা দেয়ার কৌশল শিখিয়েছিলেন।

১৮৬৫ সালে তাদের পরিবার লন্ডনে চলে যায়। এখানে পরিবার বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। গ্রাহামের ছোট ভাই এডওয়ার্ড যক্ষ্মা রোগে মারা যায়। পরে ১৮৭০ সালে আরেক ভাই মেলভিলে একই রোগে মারা যায়। এতে শঙ্কিত বাবা বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে কানাডা চলে যান। কিন্তু গ্রাহাম বেল যান বোস্টনে। ১৮৭২ সালে বধির শিক্ষকদের জন্য সেখানে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠান করেন। ১৮৭৩ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে Vocal Physiology and Elocution এর অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান এবং গবেষণা কাজে নিয়োজিত হন। এ সময়ে তিনি দেখলেন যে, তাদের মাধ্যমে চুম্বকের সাহায্যে শব্দ পাঠানো সম্ভব।

১৮৭৪ সালে তিনি harmonic telegraph আবিষ্কার করেন। যার মাধ্যমে একই সঙ্গে অনেক টেলিগ্রাফ বার্তা প্রেরণ করা যায়। এটি টেলিগ্রাফ শিল্পে একটি নতুন সংযোজন। তিনি ভাবলেন শুধু বার্তা নয়, হয়তো মানব কণ্ঠও প্রেরণ করা যেতে পারে। গবেষণা শুরু করলেন বিদ্যুতের সাহায্যে শব্দকে দূরে পাঠানো যায় কিনা। মহার কথা হলো, একই সময়ে চারজন বিজ্ঞানী টেলিফোন আবিষ্কারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তারা হলেন আমেরিকার এলিসা গ্রে ও টমাস আলভা এডিসন, স্কটল্যান্ডের গ্রাহাম বেল আর জার্মানির ফিলিপ রস। এরা সবাই আলাদাভাবে গবেষণা করেন। কিন্তু সাফল্য পান আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। ১৮৭৬ সালের ৭ মার্চ তার এ সাফল্যের স্বীকৃতি মেলে। এতে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। ১৮৭৭ সালে 'বেল টেলিফোন কোম্পানি' প্রতিষ্ঠান করেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন।

এ সাফল্যে ১৮৮০ সালে ফরাসি সরকার তাকে 'ভোল্টা প্রাইজ' প্রদানা করে। পুরস্কারের অর্থ দিয়ে ওয়াশিংটনে গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে তিনি স্পিচ মেকানিক্স নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি সম্পূর্ণ বধির ব্যক্তিকে কথা বলা শেখানোর কাজে দক্ষতা অর্জন করেন। এজন্য তাকে 'দ্য ফাদার অব দ্য ডিফ বা বোবাদের পিতা' নামে ডাকা হতো। বোস্টনে এ সময়ে ধনী আইনজীবী গার্ডিনার গ্রিন হাবার্ড এর সঙ্গে গ্রাহাম বেলের পরিচয় হয়। হার্বাডের মেয়ে ম্যাবেল জন্ম থেকেই বধির। গ্রাহাম তাকে 'স্পিচ থেরাপি' দিতেন। ১৮৮৫ সালে ম্যাবেলকে বিয়ে করেন।

গ্রাহাম বেল শুধু টেলিফোন আবিষ্কার করেননি। তিনি ১৮৮৬ সালে ফনোগ্রাফ আবিষ্কার করেন। তার নবজাতক ছেলে শ্বাসকষ্টে মারা যায়। সেই দুঃখে তিনি আবিষ্কার করেন vacuum jacket।

তিনি ইলেকট্রিক প্রোব (telephone probe)আবিষ্কার করেন। যার সাহায্যে শরীরে কোন বুলেট বা ধাতব পদার্থ থাকলে তার অবস্থান নির্ণয় করা যায়। এই বৈদ্যুতিক যন্ত্রটি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জেমস গ্যারফিল্ডকে বাঁচিয়েছিল। তিনি ১৮৮১ সালে আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। এক্স-রে মেশিন আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ যন্ত্রটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাছাড়া তিনি audiometer আবিষ্কার করেন। তিনি এমন একটি ঘুড়ি তৈরি করেন যা একটি মানুষকে বহন করে উড়তে পারত।

গ্রাহাম বেল শুধু বিজ্ঞানীই ছিলেন না। তিনি দক্ষ সংগঠকও ছিলেন। ১৯০৭ সালে Aerial Experiment Association গঠন করেন। তিনি বিশ্ব বিখ্যাত Casey ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। এবং আগে ১৮৯৮ সালে আমেরিকাতে গঠন করেন Silver Dart। তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

শেষ জীবনে তিনি কানাডার কেপ ব্রিটন দ্বীপের বেনিন ব্রেঘে নিজের বাসা নোভা স্কটিয়ায় কাটিয়ে দেন পিয়ানো বাজিয়ে। এখানেই ১৯২২ সালের আগস্টের ২ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে সে সময়ে সারা আমেরিকায় ১ মিনিটের জন্য টেলিফোন বন্ধ ছিল। তার অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিখ্যাত করপোরেশনের নাম রাখা হয়েছে Alexander Graham Bell Laboratory বা Bell Carriage House।

সূত্রঃ সংবাদ

0 comments:

Post a Comment