Breaking News
Loading...
Sunday, March 6, 2011

১৯৮০ সালের ১লা মার্চ পাকিস্তানের খাইবার এজেন্সিতে জন্মগ্রহণ করেন আফ্রিদি। তার পুরো নাম সাহিবজাদা মোহাম্মদ শাহেদ খান আফ্রিদি। তিনি ৩১৫ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ২৯৬ বার ব্যাট হাতে মাঠে নেমেছেন। অপরাজিত ছিলেন ১৮ বার। ২৩ দশমিক ৮৩ গড়ে রান করেছেন ৬হাজার ৬শ' ২৬। শতরান করেছেন ৬বার আর আধাশতক ৩১টি। সর্বোচ্চ স্কোর ১২৪। স্টাইক রেট ১১৩ দশমিক ৮৪। অর্থাৎ প্রতি ১শ' বল মোকাবেলায় তিনি করেছেন প্রায় ১শ' ১৪ করে রান। এই হার বলে দেয় তিনি কতো আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়। এছাড়াও ৩৪ দশমিক ০৩ গড়ে উইকেট শিকার করেছেন ৩শ' ৬টি। ম্যাচে ৫ উইকেট পেয়েছেন ৫বার। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৪ দশমিক ৬২। আর টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ২৭টি। ৪৮ বার ব্যাট হাতে নেমে ৩৬ দশমিক ৫১ গড়ে রান করেছেন ১হাজার ৭শ' ১৬। এরমধ্যে ৫টি শত আর ৮টি অর্ধশত রানের ইনিংস আছে। টেস্ট বোলিং-এ ৪৭ ইনিংস-এ ৩৫ দশমিক ৬ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৪৮টি। ২০০৭ টুয়েন্টি ২০ বিশ্বকাপে ফাইনালে পাকিস্তান ভারতের কাছে পরাজিত হলেও এই টুর্নামেন্টে ৯১ রান ও ১২ উইকেট পেয়ে পেস্নয়ার অব দ্য সিরিজ মনোনীত হন।


১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর কেসিএ সেন্টেনারী টুর্নামেন্টের চতুর্থ ম্যাচে তার ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু হয়। কেনিয়ার বিরুদ্ধে নাইরোবির আগা খান স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে সেদিন কিন্তু আফ্রিদি সম্পর্কে কিছুই অাঁচ করা যায়নি। এই ধরনের বোলিং প্রধান অলরাউন্ডারের জ্বলে ওঠার সুযোগ থাকে এমন দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। অধিনায়ক সাঈদ আনোয়ার পুরো ১০ ওভারই বল করান নবীন আফ্রিদিকে। কিন্তু লো স্কোরিং-এর ওই ম্যাচে পুরো ১০ ওভার বল করেও কোন উইকেট পাননি তিনি। খরচ করেন ৩২ রান। ওই ম্যাচে অভিজ্ঞ স্পিনার সাকলাইন মুসতাক ২৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন।

অসাধারণ স্ট্রোকে পারদর্শী বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এই খেলোয়াড়ের সেদিন ব্যাট হাতে মাঠেই নামা হয়নি। মাত্র ১৪৯ রানের টার্গেটে পাকিস্তান পেঁৗছে যায় ৬ উইকেট খরচায়। দলের পক্ষে অবদান বলতে কেনিয়ার পক্ষে ডেবু্য ম্যাচ খেলা টনি সুজির ক্যাচ নিয়েছিলেন সাকলাইনের বলে। তবে জ্বলে উঠতে আর বেশি সময় নেননি এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সফল এই অধিনায়ক। পরের ম্যাচেই ৪ অক্টোবর শ্রীলংকার বিরুদ্ধে। ব্যক্তিগত ২৩ রানে আর দলীয় ৬০ রানের মাথায় ওপেনার সেলিম এলাহি আউট হয়ে গেলে রানের গতি সচল রাখতে আফ্রিদিকে মাঠে ডেকে নেন অধিনায়ক। নেমেই ব্যাটে ঝড় তোলেন এই ড্যাশিং হিরো। মাত্র ৩৭ বলে করেন দ্রুততম সেঞ্চুরি। রেকর্ডটি আজো অক্ষত রয়েছে। ওই ম্যাচে আফ্রিদি আউট হন ৪০ বল মোকাবেলা করে। রান ১০২। চার মারেন ৬টি, আর ছক্কা রেকর্ডসংখ্যক ১১টি। ২০০৮ সালে ১২টি ছক্কা মেরে এই রেকর্ড ভেঙ্গে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারশাল। সেদিন সাঈদ আনোয়ারও করেছিলেন ১১৫ রান। ৯ উইকেটে পাকিস্তান করে ৩৭১ রান। অরবিন্দু ডি সিলভা ১২২ করলেও ম্যাচে জয়লাভ করতে পারেনি শ্রীলংকা। এক বল বাকি থাকতেই তারা থেমে যায় ২৮৯ রানে। আর একটিমাত্র রান করতে পারলেই নেট রান রেটের হিসেবে পয়েন্ট টেবিলে সমান থাকা পাকিস্তানকে টপকে সাউথ আফ্রিকার সাথে ফাইনাল খেলতে পারতো শ্রীলংকা। এই ম্যাচে আফ্রিদি যেমন রানের খাতা খোলেন, তেমনি শুরু হয় উইকেট প্রাপ্তিরও। ১০ ওভার বল করে ৪৩ রানের বিনিময়ে পান একমাত্র উইকেট। ফাইনালে সাউথ আফ্রিকার কাছে পরাজিত হয় পাকিস্তান। ওইদিন মাত্র ১৪ রান করে আফ্রিদি আউট হলেও বোলিং-এ নেন তিন উইকেট। এই ডেবু্য টুর্নামেন্টেই ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন আফ্রিদি।

এবার পাকিস্তানের বিশ্বকাপ শুরু হয় দুর্বল দল কেনিয়ার সাথে খেলার মধ্য দিয়ে। ২৩ ফেব্রুয়ারির ওই ম্যাচে পাকিস্তান ২০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করে। অধিনায়ক আফ্রিদি মাত্র ৭ রান করলেও বোলিং-এ জ্বলে ওঠেন। অফ স্পিনের ঘূর্ণি মায়াজালে আটকে আউট করেছেন ৫ ব্যাটস্ম্যানকে। ৩১৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে কেনিয়ার রান যখন ২ উইকেটে ৭৩ তখন শুরু হয় মায়াবী ঘাতক আফ্রিদির ধ্বংসযজ্ঞ। শুরু করেন টিকোলোকে দিয়ে। মজার ব্যাপার হলো, এরপর টানা উইকেট নিয়েছেন আফ্রিদি। মিশ্র, কামান্দে, ওদোয়ো ও ওবুয়াকে ফিরিয়ে দিয়ে কেনিয়াকে বানিয়েছেন ৮/১১২। এতো গেল দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। শক্তিশালী শ্রীলংকার বিরুদ্ধেও জয়ের নায়ক তিনিই। ২৬ ফেব্রুয়ারি এই ম্যাচে তিনি তুলে নিয়েছেন চারটি উইকেট। দিলশান, সামেরাভিরা, সাঙ্গাকারা ও ম্যাথুজকে ফিরিয়েছেন তিনি। ১০ ওভারে রান দিয়েছেন মাত্র ৩৪। এই ম্যাচ শেষে আফ্রিদি বলেছেন,'জয় অভ্যাসে পরিণত করতে চাই। আমরা কঠোর পরিশ্রম করে প্রত্যেকটা ম্যাচ জিততে চাই।' এই কথার প্রতিফলন দেখা যায় পরের ম্যাচেও। দুর্বল কানাডার বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যর্থতায় পাকিস্তান অল আউট হয় মাত্র ১৮৪ রানে। ব্যর্থ হন অধিনায়ক আফ্রিদিও। ১৭ বল মোকাবেলা করে মাত্র ২০ রান করেই আউট হয়েছেন। কিন্তু আবার জ্বলে ওঠেন বোলিং-এ। কানাডার ব্যাটস্ম্যানদের জন্য পরিণত হন মায়াবী এক ঘাতকে। পটাপট তুলে নেন ৫ উইকেট। ১০ ওভার বল করে দিয়েছেন মাত্র ২৩ রান। তার এই দুর্দান্ত বোলিং-এ হারতে বসা ম্যাচে জয় পায় পাকিস্তান। ১৩৮ রানে অল আউট হয় কানাডা। এই ম্যাচেও ক্রিকেট বোদ্ধাদের চোখে ধরা পড়েছে তার সুনিপুণ অধিনায়কত্ব। সর্বক্ষণ ছুটে এসে বোলারদের উজ্জীবিত রেখেছিলেন। তিন ম্যাচে তিনটিতেই জয় নিয়ে পাকিস্তান প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সুযোগ।

বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়ে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছেন আফ্রিদি। হ্যাটট্রিক করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেমাররোচ তিন ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে আছেন দ্বিতীয় অবস্থানে। গেস্নন ম্যাকগ্রা'র এক বিশ্বকাপে (২০০৬) ২৬ উইকেট নেয়ার রেকর্ড-এর দিকে তাকিয়ে আছেন আফ্রিদি।

০০ জাহিদুজ্জামান

0 comments:

Post a Comment