প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে যে ক'জন রাজার নাম না করলেই নয় তাদের মধ্যে হর্ষবর্ধন অন্যতম। হর্ষবর্ধন ৬০৬ খ্রি. পিতা প্রভাকর বর্ধনের থানেশ্বরের সিংহাসনে বসেন। সে সময় হুনরা কনৌজ আক্রমণ করে সেখানকার রাজাকে হত্যা করে এবং রানী রাজ্যশ্রীকে বন্দী করে। রাজ্যশ্রী ছিলেন হর্ষবর্ধনের বোন। বোনকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিহত হলেন হর্ষবর্ধনের ভাই রাজ্যবর্ধন। পরে ভাতৃহত্যার উপযুক্ত প্রতিশোধ নিয়েছিলেন হর্ষবর্ধন।
তার রাজ্যবিস্তার নীতি ততটা চমকপ্রদ না হলেও তিনি তার দানশীলতা দিয়ে জনমনে স্থান করে নিয়েছিলেন। হর্ষ তার আদায়কৃত রাজস্বকে ৪ ভাগে ভাগ করে খরচ করতেন। ১. রাজ্য শাসন ও ধর্মীয় উপাসনা বাবদ খরচ ২. রাজ কর্মচারীদের বেতন ও ভরণপোষণ খরচ ৩. বুদ্ধিজীবী-গুণীদের বৃত্তি ৪. বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়কে দান। হর্ষবর্ধনের সময়ে আয়োজন করা হতো প্রয়াগের দান মেলার। প্রতি ৫ বছর অন্তর প্রয়াগে গঙ্গা-যমুনার সঙ্গমস্থলে বসত এ মেলা। এ মেলার নাম ছিল মহামোশ্য পরিষদ। পঞ্চ ভারতের (পাঞ্জাব, কনৌজ, বিহার, বাংলা, উড়িষ্যা) প্রায় ৫০ হাজার লোক এ মেলায় যোগ দিত। নাবালক, অসহায়, দরিদ্র ব্যক্তিরা এখানে হর্ষবর্ধনের হাত থেকে দান নিত। এ ছাড়া ব্রাহ্মণ, শ্রমণ ও সন্ন্যাসীরাও এ মেলায় এসে দান গ্রহণ করত। জানলে অবাক হবেন যে, দান অনুষ্ঠানযজ্ঞ চলত একটানা ৪ দিন। প্রথম দিন বুদ্ধের উপাসনা করা হতো এবং ভিক্ষুদের মুক্তহস্তে দান করা হতো। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন যথাক্রমে সূর্য ও শিবের পূজা করা হতো। চতুর্থ দিন আবার বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হতো। এভাবে চলত দান। কিন্তু কোনো এক সময় দেখা গেল, ৫ বছরে রাজকোষে জমাকৃত অর্থ নিঃশেষ হয়ে গেল। দানবীর হর্ষ কিন্তু তাতে বিচলিত হননি। পরিশেষে নিজের অলঙ্কার ও পোশাক দান করে দিলেন এবং ভগিনী রাজ্যশ্রীর দেওয়া একটি পোশাক পরে গৃহে প্রত্যাবর্তন করলেন। দানশীলতার এমন নিদর্শন আগে বা পরে কোনো রাজা রাখতে পেরেছেন কি-না জানা নেই। শুধু দানবীরই ছিলেন না, হর্ষবর্ধন শিক্ষা এবং সাহিত্যেরও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। হর্ষবর্ধনের চরিত্রে সমাবেশ ঘটেছিল সমুদ্রগুপ্তের সমরকুশলতা ও অশোকের প্রজাহিতৈষী নীতির। ৪০ বছর রাজত্ব করার পর ৬৪৬ খ্রিস্টাব্দে এ মহান শাসকের জীবনাবসান ঘটে।
নবাব আমিন
হর্ষবর্ধন
Info Post
হর্ষবর্ধনকে শিলাদিত্য কেন বলা হয়?
ReplyDelete