Breaking News
Loading...
Wednesday, March 16, 2011

ইসলাম ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা দূরত্ব সবসময়ই পরিলক্ষিত হয়। কারণ, ইসলাম সম্পর্কে পাশ্চাত্যের জনগণের সঠিক জ্ঞানের অভাব। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর সেই দূরত্ব আরও একটু বেড়ে গেছে। পাশ্চাত্যবাসীর মধ্যে এর সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরার মাধ্যমে ইসলামের সঙ্গে পাশ্চাত্যের শীতল সম্পর্ক উষ্ণায়নের জন্য যারা এগিয়ে এসেছেন, ড. ফাতহি ওসমান তাদের মধ্যে অন্যতম। ইংরেজি এবং আরবি ভাষায় ইসলাম ও কোরআনের ব্যাখ্যাসংবলিত প্রায় ৪০টি বই লিখে পাশ্চাত্যের কাছে প্রকৃত ইসলামকে উপস্থাপন করেন তিনি। পাশ্চাত্যের ইংরেজিভাষী মুসলিম এবং অমুসলিমদের কাছে ইসলামকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করাই ছিল তার সারাজীবনের সাধনা। গত ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার নবম বার্ষিকীতে এই মনীষী চলে গেছেন পরপারে।

ড. ওসমানের জন্ম ১৯২৮ সালের ১৭ মার্চ মিসরের মিনইয়ায়। তিনি ১৯৪৮ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এবং ১৯৬০ সালে আলেক্সান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর ১৯৬২ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলাম-বাইজান্টাইন সম্পর্ক বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন।

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি পত্রিকা সম্পাদনার কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। চলি্লশের দশকে ছাত্র থাকাকালে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দেন। তখন সাংগঠনিক দায়িত্ব হিসেবে তাকে মুসলিম ব্রাদারহুডের সাপ্তাহিক মুখপত্র সম্পাদনার কাজে সহযোগিতা করতে হয়। সেখানেই সাইয়্যেদ কুতুবের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। পরে মুসলিম ব্রাদারহুডের কর্মকাণ্ড এবং সাইয়্যেদ কুতুবের সঙ্গে তার মতের অমিল হওয়ায় পঞ্চাশের দশকে তিনি উভয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। মুসলিম ব্রাদারহুড ত্যাগ করে ১৯৬০ সালে তিনি 'ইসলামিক থট অ্যান্ড চেঞ্জ' বইটি প্রকাশ করেন। এতে তিনি ইসলামে চরমপন্থার বিরোধিতার বিস্তারিত উল্লেখপূর্বক এর উদার এবং আধুনিক চিন্তাধারা উপস্থাপন করেন।

এটি ছাড়াও ড. ওসমান ব্যক্তিস্বাধীনতা, মানবাধিকার, নারী অধিকার, গণতন্ত্রসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পুস্তক রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে_ দি ইনডিভিজুয়াল রাইট ইন মুসলিম সোসাইটি : মিউচুয়াল রাইটস অ্যান্ড অবলিগেশনস (১৯৬৩), হিউম্যান রাইটস ইন ওয়েস্টার্ন থট অ্যান্ড ইসলামিক ল' (১৯৮১), মুসলিম ওমেন ইন দ্য ফ্যামিলি অ্যান্ড দ্য সোসাইটি (১৯৯০), ইসলামিক ল' ইন দ্য কনটেম্পোরারি সোসাইটি : শরিয়াহ ডায়নামিকস অফ চেঞ্জ (১৯৯৫) এবং চিলড্রেন অফ অ্যাডাম : অ্যান ইসলামিক পারস্পেক্টিভ অন প্লুরালিজম (১৯৯৫)। তবে ড. ওসমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রচনা হলো কনসেপ্টস অফ দ্য কোরআন : এ টপিকাল রিডিং (১৯৯৭)। প্রায় এক হাজার পৃষ্ঠাসংবলিত বইটিতে তিনি পুরো কোরআনকে বিষয়ভিত্তিকভাবে বিন্যস্ত ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেন। মুসলমান ছাড়াও অমুসলমান পাঠকদেরও গ্রন্থটি ইসলাম ধর্ম এবং কোরআন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করবে।

কর্মজীবনেও ড. ওসমান ছিলেন বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী। লেখালেখির পাশাপাশি করেছেন অধ্যাপনা। মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় এবং সৌদি আরবের ইবনে সউদসহ বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অধ্যাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

৮২ বছর বেঁচে ছিলেন ড. ওসমান। ২০১০ সনে ১১ সেপ্টেম্বর তিনি ইহজগৎ ত্যাগ করেন। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র এবং শান্ত স্বভাবের। তার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুসলিম পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে_ ড. ওসমান এতদূর পথ পাড়ি দিয়েছেন তার দৈহিক উচ্চতার কারণে নয়; তিনি এতদূর পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছেন মানুষের প্রতি তার সহৃদয়তা এবং সহমর্মিতার কারণে।

মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মাধ্যমে। কোরআনের ব্যাখ্যা ও এর বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনের মাধ্যমে যে মহান কর্ম তিনি সম্পাদন করেছেন, সে কারণে ইংরেজি ভাষাভাষী পাঠক ছাড়াও সারা পৃথিবীর মুসলমানদের কাছে তিনি কৃতজ্ঞতার পাত্র হিসেবেই স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
-ফরহাদ জাকারিয়া

0 comments:

Post a Comment