Breaking News
Loading...
Wednesday, March 16, 2011

বিএনপির মহাসচিব এডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ১৯৩৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বর্তমান মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার খিরাই পাঁচুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।


তিনি ১৯৪৭ সালে মানিকগঞ্জ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৪৯ সালে মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ পাস করেন।
খোন্দকার দেলোয়ার ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ এবং ১৯৫৩ সালে এমএ পাস করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে পাস করেন এলএলবি। ১৯৫৬-৫৭ সাল পর্যন্ত সিলেট মুরারি চাঁদ কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক, ১৯৫৮-৬১ সাল পর্যন্ত ঢাকা সিটি নাইট কলেজে অধ্যাপনা করেন এবং ১৯৭৬-৭৮ সাল পর্যন্ত মানিকগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে তিনি মানিকগঞ্জ কে এন হোসেন ল’ একাডেমির অধ্যক্ষ এবং মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৫২ সালের মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। পাকিস্তানি স্বৈরাচারী আইয়ুব শাহীর বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৬৯ সালের অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতা ছিলেন খোন্দকার দেলোয়ার।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
তিনি ১৯৭৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর খোন্দকার দেলোয়ার ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বিএনপি মহাসচিব হওয়ার আগে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার আগে তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করে প্রবীণ নেতা খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন।
খোন্দকার দেলোয়ার ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপি মহাসচিব হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। স্ত্রীর নাম বেগম সাহেরা হোসেন। চার পুত্র ড. খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু, খোন্দকার আক্তার হোসেন জগলু, খোন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলু ও ডা. খোন্দকার আখতার হামিদ পবন।
দুই মেয়ের নাম ডা. আখতারা খাতুন লুনা ও ডা. দেলোয়ারা হোসেন পান্না।
তিনি ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৮ম জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, ৭ম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের চিফ হুইপ ছিলেন।
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ থেকে ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচন অংশ নেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জে যে বিপ্লবী কমান্ড কাউন্সিল গঠিত হয় তিনি তার অন্যতম সদস্য ছিলেন।
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মানিকগঞ্জ আইনজীবী সমিতির পাঁচবার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন।
সংসদীয় ও সরকারি কাজে তিনি ফ্রান্স, জাপান, সুইডেন, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড, শ্রীলংকা, ভারত, মরক্কো, কম্বোডিয়া, কানাডা, ফিজি, ফিলিপাইন, মেক্সিকোসহ প্রভৃতি দেশ সফর করেন। ২০০২ সালে তিনি সস্ত্রীক হজব্রত পালন করেন।
২০০২ সালে লন্ডনে সিপিএ (কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী এসোসিয়েশন) কনফারেন্সে যোগদান করেন।
২০০২ সালে মরক্কোর মারাকাসে আইপিইউ’র (ইন্টার পার্লামেন্টারী ইউনিয়ন) ১০৭তম সম্মেলনে যোগদান করেন।
২০০৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিপি-এর ৪৯তম সম্মেলনে বাংলাদেশ সংসদীয় ডেলিগেশনের নেতা হিসেবে যোগ দেন।
২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের উইলটন পার্ক সম্মেলনে যোগদান করেন।
২০০৫ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লীতে পিপি-এর ভারত ও এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধিদলের সম্মেলনে বাংলাদেশ ডেলিগেশনের নেতা হিসেবে যোগদান করেন।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সংস্কারপন্থি বলে পরিচিত প্রয়াত নেতা আব্দুল মান্নান ভূইয়াকে বহিস্কারের পর খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে দলের কাউন্সিলে মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি।
খোন্দকার দেলোয়ার শুধু একজন রাজনীতিকই না, তিনি শিক্ষক, আইনজীবী, জননেতা, ঝানু দলনেতাও ছিলেন। জীবনের নানা লড়াইয়ে উৎড়ে গেলেও নিউমোনিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে আর টিকতে না পারলেন না তিনি।

শেষ মুহুর্তে দেশি-বিদেশি ডাক্তারদের সব চেষ্টা বিফল করে ১৬ মার্চ ২০১১ বুধবার বিকেলে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে ৩ মার্চ তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ৪ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার দুপুরে মারা যান তিনি।

নিউমোনিয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ছাড়াও নানা সমস্যায় ভুগছিলেন খোন্দকার দেলোয়ার। স্ত্রী, চার ছেলে, দুই মেয়েসহ আর অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।


উৎসঃ ,

0 comments:

Post a Comment