Breaking News
Loading...
Tuesday, June 19, 2012

নানা কারণে ভারতীয় উপমহাদেশ তো বটেই, বিশ্বজুড়ে আলোচিত এক নেত্রীর নাম মায়াবতী। ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিনি। অথচ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চেয়েও তার নেতৃত্ব ও আলোচনা-সমালোচনার ঝলকানির কোনো কমতি নেই। আর সাম্প্রতিক সময়ে মায়াবতী সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন তার বিলাসী জীবনযাপনের কারণে। পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জি বনাম উত্তর প্রদেশের মায়াবতী।
Mayavati Kumari (Mayawati)

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর জন্ম নয়াদিলি্লতে ১৯৫৬ সালের ১৫ জানুয়ারি। মায়াবতীর ছয় ভাই এবং দুই বোন। তার বাবা প্রভুদাশ ডাকবিভাগে কাজ করতেন। কালীন্দি উইমেন্স কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করার পর ইউনিভার্সিটি অব দিলি্ল এবং মেরুট ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেন তিনি। মায়াবতী চিরকুমারী। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, পরিবার এবং কোনো ধরনের ব্যক্তিগত সম্পর্কের জন্য তার কোনো সময় নেই। এ কারণেই তিনি বিয়ে করবেন না। রাজনীতি তার ধ্যান-জ্ঞান সবই। ১৯৮৪ সালে যখন কানশি রাম বিএসপি পার্টি গঠন করেন তখন মায়াবতী সেই পার্টিতে অপরিহার্য সদস্য হিসেবে সংগঠকের ভূমিকা রেখেছিলেন। বহুজন সমাজ পার্টিতে রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। তবে ১৯৮৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করার পর তিনি সবার নজরে আসেন। ২০০৯ সালের পার্লামেন্টারি নির্বাচনের পর তিনি মুখ্যমন্ত্রী হন। কুমারী মায়াবতী লাখ লাখ দলিত মানুষের প্রতীক। উত্তর প্রদেশ ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এবং গরিব রাজ্যগুলোর মধ্যে একটির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার নারীনেত্রী হিসেবে তিনি সুপরিচিতি পেয়েছেন। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি উত্তর প্রদেশ থেকে নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ নারী রাজনীতিবিদ রাজ্যসভায় জায়গা করে নেন। ১৯৯৩ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট পিভি নরসিমা রাওয়ের সঙ্গে জোট করে সমাজপার্টি নিয়ে রাজ্যসভায় জায়গা করে নেওয়াটাকেই মায়াবতীর রাজনৈতিক উত্তরণের প্রথম সফর ধাপ হিসেবে বলা হয়। রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে তার চলার পথ মসৃণ নয় বরং তার সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ভোট ময়দানে সব পক্ষই মোটামুটি এক সুরে কথা বলেছিল এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে সবারই অভিযোগ ছিল। নির্বাচনের আগে মুলায়ম সিং যাদব সক্রিয়ভাবে মাঠে নেমেছিলেন এবং বড় দলগুলোর পাশাপাশি তথাকথিত ছোট দলগুলোও তার সঙ্গে জোট গড়েনি। সংখ্যালঘু ভোট টানতে শাহি ইমামের সমর্থন আদায় করেছিলেন মুলায়ম। বিজেপির উমা ভারতীকে সুকৌশলে তুলে ধরে অনগ্রসর শ্রেণীর ভোট টানতে কৌশলী পদক্ষেপ ফেলেছিল বিজেপি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। নির্বাচন কমিশন যখন রাজ্যজুড়ে মায়াবতী ও তার দলের নির্বাচনী প্রতীক হাতির মূর্তি ঢেকে দেওয়ার নির্দেশ দেয়, তখন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের আচরণকে 'দলিত-বিরোধী' বলে ব্যাখ্যা করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন। বিজেপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই বলেছিলেন, নির্বাচনে মায়াবতীর পতন হবে। হলোও তাই। নির্বাচনে হারার পর তিনি ৭ মার্চ ২০১২ ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। গত বছর হঠাৎ উত্তর প্রদেশ ভাগের কথা বলে ঝড় তুলেছিলেন মায়াবতী। কিন্তু সেই কৌশল আর সফল হয়নি। তবে এই মুখ্যমন্ত্রীর বিলাসী জীবনের তথ্য ফাঁস করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে ভিন্নধারার গণমাধ্যম উইকিলিকস। সে বার্তাটি প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতীয় মহিলা রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি যতটা আলোচিত, ঠিক ততটাই সমালোচিত হয়েছেন। ভারতের নিযুক্ত মর্কিন কূটনীতিকের ২০০৭-২০০৯ সালে ওয়াশিংটনে প্রেরিত বার্তা থেকে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য প্রকাশ করেছে। ভারতের বহুজন সমাজ পার্টির সভানেত্রী ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ৫৫ বছর বয়সী মায়াবতীকে একজন প্রথম শ্রেণীর আত্দঅহমিকাসম্পন্ন নারী বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। উইকিলিকসে বলা হয়েছে, ব্যক্তিজীবনে তিনি অভিজাত বিলাসিতায় অভ্যস্ত এবং অত্যন্ত নামিদামি ব্রান্ডের জিনিস ব্যবহার করতেন। চিরকুমারী ও শৌখিন মায়াবতী তার বাসস্থান থেকে অফিস পর্যন্ত একটি ব্যক্তিগত সড়কও তৈরি করেছেন। প্রতিবার তার গাড়িবহর বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই সড়কটি পরিষ্কার করা হয় বলেও জানিয়েছে উইকিলিকস। আরও অভিযোগ রয়েছে, উত্তর প্রদেশের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী তার রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছ থেকে অপরাধের জরিমানাস্বরূপ নাকি উৎকাচও গ্রহণ করেন। এ ছাড়া মায়াবতী নাকি তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দলীয় নেতা, ব্যবসায়ী ও আমলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বহু মূল্যের উপহার সামগ্রী গ্রহণ করতেন। তারবার্তায় আরও বলা হয়, মায়াবতীর যখনই জুতার দরকার হয় তখনই উত্তর প্রদেশ থেকে মুম্বাইয়ে একটি যাত্রীবিহীন বিমান পাঠানো হয় তার পছন্দের জুতা নিয়ে আসার জন্য। মায়াবতী বিগত বছরগুলোতে রাজধানী লক্ষ্নৌসহ বেশ কিছু স্থানে পার্ক নির্মাণ করেছেন এবং সেখানে তিনি তার নিজের মূর্তিও স্থাপন করেছেন। উইকিলিকসের প্রকাশিত তথ্যের নিন্দা জানানোর জন্য মায়াবতী উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্নৌতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। মায়াবতী জুতা আনতে তার ব্যক্তিগত বিমান পাঠানোর মার্কিন গোপন তারবার্তার খবর অস্বীকার করে বলেছিলেন, এ তথ্য ফাঁসকারী ব্যক্তিকে পাগলা গারদে রাখা উচিত। এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীকে তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। তবে শেষ পর্যন্ত মুখ থাকেনি মায়াবতীর। কারণ দ্য অডিটর অ্যান্ড কম্পোট্রলার জেনারেল স্বীকার করেছেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে মায়াবতীর অসংখ্য মূর্তি নির্মাণ নিয়ে তারাও প্রশ্নবিদ্ধ।

--তানভীর আহমেদ

0 comments:

Post a Comment