Breaking News
Loading...
Friday, July 13, 2012

জ্ঞানতাপস, বহু ভাষাবিদ, ভাষা বিজ্ঞানী, গবেষক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের চবি্বশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাবা-মার পঞ্চম সন্তান। তাঁর বাবা মফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন ইংরেজ আমলে সরকারি জরিপ বিভাগের একজন কর্মকর্তা। তার মা হরুন্নেছা খাতুনের শিক্ষার প্রতি ছিলো প্রবল আগ্রহ।
একটু বেশি বয়সেই স্কুলে গিয়েছিলেন তিনি। পড়তে অসম্ভব ভালো লাগতো তাঁর। সে ভালো লাগা এমনই যে চারপাশের সবকিছুই ভুলে যেতেন তিনি। এমনকি নাওয়া-খাওয়ার কথাও মনে থাকতো না তাঁর। পড়তে পড়তে কখন যে স্কুলের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে সে খেয়ালও তাঁর থাকতো না। তিনি কমপক্ষে ২২টি ভাষা জানতেন।

স্কুলজীবন থেকেই তিনি আরবী-ফার্সী-উর্দুর পাশাপাশি হিন্দি ও উড়িয়া ভাষা পড়তে শিখেছিলেন। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন ১৯১০ সালে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এমএ পাস করেন। বিভিন্ন চাকরি শেষে ১৯২১ সালের ২ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক নিযুক্ত হন। তিনি বাংলা, ইংরেজী, আরবী, জার্মান, ফরাসী, ল্যাটিন, হিব্রু, ফার্সী, উর্দূ, হিন্দীসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। এ কারণে তাকে বহু ভাষাবিদ বলা হয়। ১৯২৮ সালে ফ্রান্স থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

আমাদের এই পুরো উপমহাদেশ যে একসময় বৃটিশদের কাছে পরাধীন ছিলো তাতো আর তোমাদের নতুন করে জানার কিছু নেই। এই বৃটিশদেরকে দেশ থেকে তাড়ানোর জন্য সেময় যে আন্দোলন হয়েছিলো তাকেই স্বদেশী আন্দোলন বলা হয়। স্বদেশী আন্দোলনের সময় চারদিকে যখন বিদেশী পণ্য বর্জনের ডাক শুরু হয়ে গেছে। ঠিক তখন থেকেই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সাহেবী প্যান্ট-কোর্ট ছেড়ে দিয়ে খদ্দরের কাপড়ের আচকান, পায়জামা আর পাঞ্জাবী পরা শুরু করে দিলেন। তিনি মনে করতেন, দেশি জিনিষ ব্যবহার করলে দেশে পয়সাটা থাকে আর বিদেশি জিনিস ব্যবহারে দেশের পয়সাটা বিদেশে চলে যায়।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯১৪ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সীতাকুন্ড উচ্চ বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন ওকালতিও প্র্যাকটিস করেছিলেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে সে বছরের ২ জুন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। থাকতেন ঢাকার চকবাজারের লাগোয়া বেগমবাজারে। বেগমবাজারের দক্ষিণ দিকে যে পথ, তার কোণাকুণি জায়গাটায় একটা পাকা দোতলা বাড়ি, বাড়ির নাম 'পেয়ারা ভবন'। ১৯৪৪ সালের ৩০ জুন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন।

১৯৪৮ সালে ঢাকার কার্জন হলে অনুষ্ঠিত পূর্ববঙ্গ সম্মেলনে তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের নাম 'বাংলা একাডেমী' রাখার প্রস্তাব করেছিলেন, তাইই আজকে আমাদের 'বাংলা একাডেমী'।
১৯৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তানি ভাষার আদর্শ অভিধান প্রকল্পের সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন বাংলা একাডেমীতে। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ_ কানপার গতি ও দোহা, বাংলা সাহিত্যের কথা, বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত, ভাষা ও সাহিত্য, বাংলা ব্যাকরণ, মহররম শরীফ, ইসলাম প্রসঙ্গ, কুরআন প্রসঙ্গ প্রভৃতি। তিনি বহু গবেষণামূলক প্রবন্ধ, অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেন। 'আঞ্চলিক ভাষার অভিধান' সম্পাদনা তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই দেশের রাষ্ট্রভাষা উর্দু না বাংলা- এ বিতর্কে তিনি বাংলার পক্ষে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তার এ ভূমিকা পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রজনতার মাঝে সশরীরে উপস্থিত থেকে সবাইকে উদ্বুদ্ধও করেছিলেন তিনি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে পুলিশের হামলায় টিয়ার গ্যাসেও আহত হয়েছিলেন।

আজীবন উদ্যমী এই মানুষটি সর্বদা ছিলেন কর্মচঞ্চল। যখন বুড়ো হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তখন ডান হাতের লেখার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। খুব দুঃখিত হয়ে বলেছেন, ‘ভালো হয়ে নিই, বাম হাতে লেখার অভ্যাস করবো’। ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই সুদীর্ঘ কর্মজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে তাঁর। ঐতিহাসিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল সংলগ্ন মূসা খাঁন মসজিদের পশ্চিমপাশে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। ঐ বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ঢাকা হলের নামকরণ করা হয়েছিলো শহীদুল্লাহ হল।

উৎসঃ কিডজ বাংলা নিউজ ২৪বাংলাদেশ প্রতিদিন

0 comments:

Post a Comment