Breaking News
Loading...
Sunday, January 6, 2013

টাঙ্গাইল জেলার অশোকপুর গ্রাম। এ গ্রামটিকে বিখ্যাত গ্রাম বলাই যায়। আর কেন এ গ্রাম বিখ্যাতা সে গল্পটা তাহলে জেনে নেই আমরা। এ গ্রামেরই দরিদ্র যুবক ভগবানচন্দ্র। তার স্ত্রী কুসুমকামিনী দেবী। এ দম্পতির সংসারে সুখ নেই। কুসুমকামিনী দেবীর পরপর সাতটি সন্তান জন্মের পরপরই মারা যায়। এ নিয়ে মন খারাপের শেষ নেই ভগবানচন্দ্র আর কুসুমকামিনীর।

এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো সময়। ১৯১৩ সালে অষ্টমবারের মত গর্ভবতী হলেন কুসুমকামিনী। আর এবারও দুর্ঘটনা ঘটে। ঐ বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি সাত মাস বয়সেই জন্ম নেয় তাদের একটি পুত্র সন্তান। এ সন্তানকে এখন বাঁচিয়ে রাখাই যেন তাদের জীবনের আরেক নতুন যুদ্ধ। তবে শেষ চেষ্টটা করে যেতে চান ভগবানচন্দ্র। বহু কষ্টে আর যত্নে এ সন্তানকে বাঁচিয়ে তুললেন ভগবানচন্দ্র আর কুসুমকামিনী।

যেন জাদুর মত ঘটনা ঘটে গেল। আর এ সন্তানের নাম রাখলেন তারা প্রতুল। এ ছেলে যেন জাদুর মায়া নিয়েই জন্মগ্রহণ করেছে। বাবা ভগবানচন্দ্র জাদু দেখাতে জানেন। ছেলে বাবার কাছে জাদু শিখতে চায়। কিন্তু বাবার বারণ, না জাদু বিদ্যা শেখা যাবে না। কারণ সেই সময়ে জাদু বিদ্যাকে কালোবিদ্যা হিসেবে দেখা হতো। অশুভ ভাবা হত।


সেই টাঙ্গাইলের আশোকপুর গ্রামের গরিব ঘরের প্রতুলচন্দ্র একদিন বিশ্বের কাছে পিসি সরকার হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। আর কিছু নয়। শুধু জাদুর জালে বন্দি করে রেখেছিলেন শত শত মানুষের মন। ঘোরগ্রস্থ করে রেখেছিলেন সবাইকে। নিজের মেধা আর মনন দিয়ে এ উপমহাদেশের জাদু শিল্পটাকে একটি উচ্চতর জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছিলেন বিশ্ববাসির কাছে।

১৯৪৭ এর দেশভাগের সময় টাঙ্গাইল ছেড়ে পুরো পরিবার মিলে কলকাতায় চলে আসেন প্রতুল। চাকরি নিলেন স্কুল মাস্টারির। কিন্তু জাদু তাকে ছাড়ে না। তিনিও জাদুকে ছাড়তে চান না। তিনি জাদু প্রদর্শনীকে নাম দিয়েছিলেন ইন্দ্রজাল। আর তিনিই প্রথম জাদু প্রদর্শনীতে আবহ সংগীতের প্রচলন করেন।

১৯৫৬ সালের ৯ এপ্রিল লন্ডনে বিবিসি টেলিভিশনে সন্ধ্যার একটি অনুষ্ঠানে জাদু দেখাচ্ছিলেন সরকার। তিনি একটি মেয়েকে কেটে দুই টুকরা করে ফেলেন। কিন্তু মেয়েটিকে জোড়া লাগানোর দৃশ্য আর দেখতে পারিনি দর্শক। এরই মধ্যে অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে গেছে। এর পর বিবিসি নিউজ শুরু। ফোন আসতে থাকে নানা মানুষের। সবাই ভয়ে ছিলেন। পরের দিন লন্ডনের সবকটি দৈনিকে এ খবরটি প্রকাশ পায়। আর এর সঙ্গে সঙ্গে আলোচনায় চলে আসে একটি নাম। তিনি এই প্রতুলচন্দ্র সরকার বা পিসি সরকার।

১৯৬৪ সালে তাঁকে ভারত সরকার পদ্মশ্রী উপাধীতে ভূষিত করেছিল। ২০১০ সালে তাঁর উপর পাঁচ টাকার একটি ডাক টিকেটও প্রকাশ করে ভারত। বালিগঞ্জের তার বাসভবনের পাশের একডালিয়া সড়কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে পিসি সরকার সরণি।

আজ ৬ জানুয়ারি এ মহান জাদু শিল্পীর মৃত্যুদিন। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে তিন মাসের জন্য জাদু প্রদর্শনী করতে জাপান গিয়েছিলেন সরকার। সেখানে ১৯৭১ সালের ১ থেকে ৫ জানুয়ারি মাত্র পাঁচটি জাদু প্রদর্শনী করতে পেরেছিলেন তিনি। ৬ জানুয়ারি সেখানেই মারা যান প্রতুলচন্দ্র। 

প্রকাশিত হয়েছে: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
লিখেছেন: গোলাম রাব্বানী বিভাগীয় প্রধান বিনোদন

0 comments:

Post a Comment