Breaking News
Loading...
Sunday, January 20, 2013

আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান যিনি শহীদ আসাদ নামেই পরিচিত। শহীদ আসাদ ১৯৪২ সালের ১০ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর থানার ধুনুয়া গ্রামে। বাবার নাম আলহাজ মোহাম্মদ আবু তাহের।
১৯৬০ সালে আসাদ শিবপুর হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করে সিলেটের এম.সি কলেজে (মুরারী চাঁদ কলেজ) ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালে ওই কলেজ থেকে আই.এ (ইন্টারমিডিয়েট) পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অনার্সসহ বি.এ ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে বি.এ (অনার্স) এবং ১৯৬৭ সালে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। এই বৎসরেই আসাদ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এবং কৃষক সমিতির সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষাণী'র নির্দেশনায় কৃষক সমিতিকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে শিবপুর, মনোহরদী, রায়পুরা এবং নরসিংদী এলাকায় নিজেকে নিযুক্ত করেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত প্রাণ আসাদুজ্জামান গরীব ও অসহায় ছাত্রদের শিক্ষার অধিকার বিষয়ে সজাগ ছিলেন। তিনি শিবপুর নৈশ বিদ্যালয় নামে একটি নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং শিবপুর কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদেরকে সাথে নিয়ে আর্থিক তহবিল গড়ে তোলেন। পরে সিটি ল’ কলেজে এলএলবিতে ভর্তি হন এবং ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ছাত্র সংগঠনগুলো স্বৈরতান্ত্রিক শাসন উচ্ছেদের জন্য সর্ব দলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এবং আন্দোলনের ১১ দফা কর্মসুচী ঘোষণা করে। এই আন্দোলন ক্রমে জোরদার হতে থাকে। আইয়ুব খানের এজেন্ট মোনেম খান ও তার সরকার ছাত্র আন্দোলনের গতি রুদ্ধ করার জন্য ছাত্রদের উপর পুলিশী জুলুম চালু করে। ৬৯’-এর ২০শে জানুয়ারী পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নসহ অন্যান্য সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১১ দফা দাবীতে ছাত্রসভা ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করে। আইয়ুব স্বৈরাচার এই কর্মসূচী বানচাল করার জন্য সমগ্র ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারী করে। পুলিশী জুলুমের প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি তারিখে ছাত্র নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এক সভা আহ্বান করে। সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হতে শুরু করেন ছাত্র-ছাত্রীরা। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশিত হয়। একটি সংক্ষিপ্ত ছাত্রসভা শেষে দুপুর ১২টার দিকে জরুরী আইন উপেক্ষা করে প্রায় ১০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী স্লোগান দিতে দিতে ব্যারিকেডের দিকে এগিয়ে যান। গোটা বিশ্ববিদ্যালয় তখন পুলিশ, ইপিআর দিয়ে ঘেরাও করা। এক পর্যায়ে শুরু হয় পুলিশ, ইপিআরের সাথে ছাত্রদের সংঘাত আর তা ঘণ্টাব্যাপী চলতে থাকে। পুলিশ-ইপিআর-এর মারমুখী আক্রমণে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। খন্ড খন্ডভাবে মিছিল এগিয়ে চলে। আসাদের নেতৃত্বে একটি খন্ড মিছিল মেডিক্যাল কলেজের সামনে রাস্তা ধরে চাঁন খাঁ’র পুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, এসময় সশস্ত্র পুলিশ ও ইপিআর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে বেলা আনুমানিক দেড়টার দিকে মূল ঘটনাস্থলের অনতিদূরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব দিকের প্রধান ফটকের পাশের ফুটপাতের উপর জনৈক পুলিশ অফিসার (অনুমান করা হয় সেই পুলিশ অফিসারের নাম বাহাউদ্দিন ডিএসপি) খুবই কাছ থেকে আসাদকে লক্ষ্য করে গুলি করে, যে গুলি আসাদের বক্ষ বিদীর্ণ করে, বুকে বুলেট নিয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। একই সাথে আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। ক্ষিপ্ত ছাত্ররাও সমানে ঢিল ছুড়তে থাকেন। তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে মাথা ফেটে যায় সেই পুলিশ অফিসারের। জিপে করে দ্রুত সরে পড়ে পুলিশ অফিসার। তৎক্ষণাত গুলিবিদ্ধ আসাদকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আসাদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়ার সাথে সাথে আসাদের বড় ভাই ডা. এন. এম. মুরশীদুজ্জামান আসাদকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। হাসপাতালের সব ডাক্তাদের সম্মিলিত চেষ্টাতেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। পিস্তলের গুলি আসাদের হৃদপিন্ডের বাম নিলয় বিদীর্ণ করে। শহীদ হন আসাদ।

0 comments:

Post a Comment