Breaking News
Loading...
Monday, March 11, 2013

জর্জিয়-ব্রিটিশ এই সংগীত তারকা প্রায় এক দশক সময় ধরে তার সংগীত জীবনে পেয়ে আসছেন সাফল্য, খ্যাতি এবং স্বীকৃতি। ২০০৩ সালে প্রথম অ্যালবাম 'কল অব দ্য সার্চ'-এর মধ্য দিয়ে পপ সংগীত অঙ্গনে গীতিকার, সুরকার ও গায়িকা হিসেবে কেটি আত্মপ্রকাশ করেন। তার গল্পটি লিখেছেন প্রঞ্জল সেলিম

কেটির জন্ম ১৯৮৪ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের জর্জিয়ায়। তারপর মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি উত্তর আয়ারল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানকার এক প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন তিনি। পড়ুয়া ধরনের মেয়ে ছিলেন তিনি। জীবনে বড় কিছু হবেন এ ছিল তার চিন্তা। কীভাবে মানুষের দুঃখ লাঘব করা যায় তা নিয়ে সেই ছোট্ট কেটি চিন্তা করতেন সব সময়ই। ১৩ বছর বয়সে তিনি চেয়েছিলেন একজন রাজনীতিবিদ হতে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'আমার ভেতরে ওই ক্ষমতাটুকু আছে যা দিয়ে মানুষের উপকার করা যায়।' কেটি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি তিনি গায়িকা হবেন। এ নিয়ে তার কোনো স্বপ্নও ছিল না। অথচ তারই প্রথম অ্যালবাম কিনা বিক্রি হয়েছে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি কপি। তার গানের জগতে প্রবেশের গল্পটা অনেকটা নিজেকে বাজিয়ে দেখার মতো। তার বাবা ছিলেন ডাক্তার। ১৯৯৩ সালে বাবার পেশার সুবাদেই কেটি চলে আসেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট শহরে। ১৯৯৭ সালে তার পরিবার থিতু হয় লন্ডনে এবং ২০০৫ সালে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব লাভ করেন। সেখানেই কেটি 'ব্রিট পারফর্মিং আর্টস অ্যান্ড টেকনোলজি স্কুল'-এ সংগীত শিক্ষা লাভ করেন। আর ওই সময় থেকেই শুরু হয় তার সংগীত চর্চা এবং পরিচয় হয় ভবিষ্যত্ ম্যানেজার ও প্রযোজক মাইক ব্যাটের সঙ্গে। ১৫ বছর বয়সে ব্রিটিশ টেলিভিশন আই টিভির 'নবাগত সংগীত শিল্পী প্রতিযোগিতা' জয়ের মধ্য দিয়ে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্রকাশ পায় তার প্রথম অ্যালবাম। পাঁচ বছর নদার্ন আয়ারল্যান্ডে কাটিয়ে তারা তখন ইস্ট লন্ডনে, পুরোনো বন্ধুদের জন্য মন খারাপ করে দিন কাটে কেটির। লন্ডনের ব্যস্ত মানসিকতার সঙ্গেও খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না। সারাদিন বই পড়ে আর টিভি দেখেই সময় কাটাতেন তিনি। টিভিতে ব্রিটেনের 'আইটিভি'র 'স্টারস আপ দেয়ার নোজ' নামের একটি ট্যালেন্টহান্ট প্রতিযোগিতার বিজ্ঞাপন দেখে তিনি সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এ প্রতিযোগিতায় মারিয়া কেরির 'উইদাউট ইউ' গানটি নিজের কণ্ঠে পরিবেশন করে তিনি অর্জন করেন প্রথম স্থান। কিন্তু প্রতিযোগিতার প্রথম স্থানটিও তাকে গানের জগতে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্ন দেখাতে পারেনি। তাই তো আবার বাড়ি ফিরে বইয়ের ভেতরেই ডুব দিলেন তিনি। এদিকে সুরকার এবং প্রযোজক মাইক বাট জ্যাজ ব্যান্ডের জন্য ভোকাল খুঁজতে হানা দেন তাদের স্কুলে। প্রথমে গান গাইতে চাননি তিনি। তারপর একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে তিনি সিদ্ধান্ত নেন গান গাওয়ার। সেই সঙ্গে মাইক বাটও খুঁজে পান এ অনন্য প্রতিভাকে। মাইক এবং কেটি একত্রে লেগে যান রেকর্ডিংয়ের কাজে। ২০০৩ সালের জুন মাসে 'দ্য ক্লোসেস্ট থিং টু ক্রেজি' সিঙ্গেলটি বাজারে আসে। যা টপ চার্টে দশম স্থান দখল করে। ২০০৩ সালের নভেম্বরে তার প্রথম একক অ্যালবাম 'কল অব দ্য সঙার্স' বাজারে আসে। এই অ্যালবামের প্রথম গান 'দ্য ক্লোজেস্ট থিং টু ক্রেজি' ইউরোপ জুড়ে দারুণ সারা ফেলে এবং লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়। অ্যালবামটি টপ চার্টগুলোতে প্রথম স্থান দখল করে। কেটির এ পর্যন্ত তিনটি অ্যালবাম বাজারে এসেছে। প্রথমটি বাদে অন্য দুই অ্যালবামের নাম হলো 'নাইন মিলিয়ন বাইসাইকেল' এবং 'পিস বাই পিস'। আর তার অ্যালবামগুলোর দর্শকপ্রিয়তাও অনেক বেশি। মাইক তার এ প্রিয় ছাত্রী সম্পর্কে বলেন, 'কেটি হলো খাঁটি সোনা যাকে কখনোই অবহেলা করা যায় না। গানের ভোকাল, গায়কী এবং লাইভ অনুষ্ঠানে গানের উপস্থাপন তাকে এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। যা তাকে ধীরে ধীরে আরও উপরে পৌঁছে দেবে।'
শুধু রূপেই নয়, গুণেও অনন্য এ মেয়েটি গত বছরের ডিসেম্বরে লন্ডনের ওয়েবরলিতে গান পরিবেশন করেছেন। আবার লাইভ কনসার্ট বিষয়েও তার রয়েছে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি বলেন, 'আমার মনে হয় কনসার্টের মাধ্যমে একজন গায়ক বা গায়িকার নিজস্বতা বোঝা যায়। হাজার হাজার মানুষের সামনে গান গেয়ে তাদের আনন্দ দেওয়াটা সহজ নয়।' আবার, নরওয়ের সমুদ্রের ৯৯৪ ফুট পানির নিচে কনসার্ট করে তিনি 'গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস'-এ নিজের নামটি যুক্ত করেছেন। এর আগে এত বড় দুঃসাহস আর কারও হয়নি। ন্যাচারাল গ্যাস প্রোডাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে কনসার্টটির আয়োজন করা হয়। নরওয়ের তেল কোম্পানি 'এএসএ' কনসার্টটির আয়োজন করেছিল। কেটি তার এ অনন্য অর্জন সম্পর্কে বলেছেন, 'এটা আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃসাহসিক কাজ যা চিন্তা করতেও আমার এখন ভয় হয়। তবে আমি প্রায় এক ঘণ্টার একটি পারফর্ম করতে সফল হয়েছি। ধন্যবাদ আমার ব্যান্ড দলের সদস্যদের।'
Katie-Melua 2009
তার কাব্যিক-কোমল সুরেলা কণ্ঠে ব্লুজ, জ্যাজ ও লোকসংগীতের ছোঁয়ায় এক নতুন স্বাদের পপ সংগীত উপহার দিয়েছেন অসংখ্য অনুরাগীদের। ২০১০ সালে হঠাত্ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন কেটি। অবশ্য বেশ কিছু সময় বিরতির পর, গত বছর তিনি আবারও ফিরে আসেন মঞ্চে। আর এ বছরের মার্চ মাসে বের হয়েছে কেটির পঞ্চম সফল অ্যালবাম 'সিক্রেট সিম্ফনি'।
তার পরবর্তী অ্যালবাম 'পিস বাই পিস' এবং 'পিকচার্স'-এর মধ্য দিয়ে, বিশ্ব পপ সংগীতাঙ্গনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একের পর এক কনসার্টের মধ্য দিয়ে জয় করেন অসংখ্য সংগীত অনুরাগীর হূদয়।

0 comments:

Post a Comment