Breaking News
Loading...
Tuesday, April 2, 2013

ক্রিস্টোফার কলম্বাসের জন্ম ইতালির জেনোয়া নামক এক বন্দর নগরীতে। তার জন্ম সাল নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। তবে ইতিহাসবিদদের ধারণা ১৪৫১ সালে তার জন্ম। সাগর পাড়ে জন্ম নেওয়ায় সাগরের প্রতি তার ছিল আজন্ম টান। সেই টানেই কৈশোর পেরোতে না পেরোতেই উঠে পড়েছিলেন জাহাজে, নাবিক হিসেবে। সেখান থেকে ঘুরতে ঘুরতে একসময় চলে এলেন পর্তুগালে। পড়ালেখা করতে করতে জানতে পেরেছিলেন ভারতের কথা, ভারতবর্ষের প্রাচুর্যের কথা, সম্পদের কথা। তখন থেকেই তার মাথায় চিন্তা, ভারতে আসার সমুদ্রপথটি আবিষ্কার করতে হবে। কলম্বাস চিঠি লিখলেন সে যুগের বিখ্যাত ভূগোলবিদ পাগোলো টোসকানেলিকে। পাগোলো কলম্বাসের চিঠির জবাবে লিখলেন, 'তোমার মনের ইচ্ছার কথা জেনে আনন্দিত হলাম। আমার তৈরি সমুদ্রপথের একটা নকশা পাঠালাম। যদিও এই নকশা নির্ভুল নয়, তবুও এ নকশার সাহায্যে প্রাচ্যের পথে পৌঁছতে পারবে। যেখানে ছড়িয়ে আছে অফুরন্ত হীরা, জহরত, সোনা-রুপা, মণি-মুক্তা, মাণিক্য।' এ চিঠি পেয়ে কলম্বাসের মন থেকে সব সংশয় দূর হয়ে গেল। শুরু হয়ে গেল তার যাত্রার প্রস্তুতি। কলম্বাসের ইচ্ছার কথা শুনে সবাই অবাস্তব অসম্ভব বলে উড়িয়ে দিলেন। একটি মানুষও এগিয়ে এলো না তার সমর্থনে বা সাহায্যে। পর্তুগালের রাজার কাছ থেকে সাহায্য না পাওয়ায়, তিনি চলে গেলেন স্পেনে। স্পেনের রানী তখন ইসাবেলা। রানী ইসাবেলাকে জানালেন তার সেই পরিকল্পনার কথা। রানী এ পরিকল্পনার কথা শুনে সানন্দ্যেই রাজি হয়ে গেলেন। ভারতের জলপথ আবিষ্কারের অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিলেন তিনি। এরপর ১৪৯২ সালের ৩ আগস্ট সান্তা মারিয়াম, পিন্টা এবং নিনা নামের তিনটি জাহাজ নিয়ে কলম্বাস শুরু করলেন ভারতবর্ষের উদ্দেশ্যে প্রথম সমুদ্রযাত্রা। ১২ আগস্ট, ১৪৯২ কলম্বাস এসে পৌঁছেন ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে। সেখানেই কাটান বেশ কয়েকদিন। ৬ সেপ্টেম্বর ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ থেকে যাত্রা শুরু করে ৯ তারিখে তারা গিয়ে পড়লেন একেবারে কূলকিনারাহীন অথৈ এক মহাসাগরে। জাহাজের বহর কেবল চলছে আর চলছেই, কোনো কিনারারই আর দেখা মেলে না! জাহাজের নাবিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে একবার তো আক্রমণই করে বসল কলম্বাসকে। তখন তাকে রক্ষা করেছিলেন তার প্রধান সহায়ক পিন জন। এভাবেই সাগরে ভাসতে ভাসতে একসময় দেখা গেল একঝাঁক পাখি, দল বেঁধে উড়ে যাচ্ছে। সেটা দেখে অনুমান হলো, সামনে কোথাও নিশ্চয়ই ভূখণ্ড আছে। সেই পাখির দলকে অনুসরণ করে জাহাজ চালানোর নির্দেশ দিলেন কলম্বাস। সেই বরাবর চলতে চলতে ১২ অক্টোবর ১৪৯২ সালে দেখা পাওয়া গেল ডাঙ্গার। পরদিন দুপুরে সেই দ্বীপে নামলেন কলম্বাস। স্পেনের রাজা ও রানীর নামে দখল করলেন সেই দ্বীপ। দ্বীপের নাম রাখলেন 'সান সালভাদর'। কলম্বাস ভেবেছিলেন তিনি জাপানের কোনো একটি দ্বীপে চলে এসেছেন। আরও পশ্চিমে গেলে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে ভারত। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ওটা ছিল আসলে আজকের বাহামা দ্বীপপুঞ্জের ক্ষুদ্র দ্বীপ 'গুয়ানিহানি'। কলম্বাস বুঝতেই পারেননি তিনি এমন এক দেশে চলে এসেছেন, যেখানে আগে কখনোই কোনো সভ্য মানুষের পায়ের ছাপ পড়েনি। এরপর তিনি ওই অঞ্চলের আশপাশে আরও কয়েকটি দ্বীপ আবিষ্কার করেন। কলম্বাস পরের বছর ফেরত আসেন স্পেনে। রানী ইসাবেলাকে জানান, তার এই আবিষ্কারের কাহিনী। রানী অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন কলম্বাসের ওপর, তাকে ভূষিত করেছিলেন রাষ্ট্রীয় সম্মানে। কলম্বাস এরপর আরও তিনবার সমুদ্র যাত্রায় বের হয়েছিলেন। তখন অনেকগুলো দ্বীপই খুঁজে বের করেছিলেন তিনি। ১৫০৬ সালে, মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তার ধারণা ছিল তিনি ভারতেই এসেছেন। পরে তার এই ভুল ধরিয়ে দিয়েছিলেন ইতালীয় নাবিক, আমেরিগো ভেসপুচি।

0 comments:

Post a Comment