কলম্বাস তো আমেরিকাকেই ভারতবর্ষ ভেবে একসময় মারা গেলেন। আর সেটা যে ভারত না, তাও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জানা হয়ে গেল। এই ভুল ধরিয়ে দিয়েছিলেন ইতালীয় নাবিক, আমেরিগো ভেসপুচি। কলম্বাসের এই সমুদ্রযাত্রার কয়েক বছর পরই; ১৪৯৭ সালে, পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দ্য গামা সমুদ্রযাত্রা শুরু করেন। উদ্দেশ্য, ভারতে যাওয়ার সমুদ্রপথটি আবিষ্কার করা। তার এই যাত্রার সব সাহায্য করেছিলেন পর্তুগালের রাজা। চারটি জাহাজের বহর নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন ভাস্কো দ্য গামা। আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল ধরে যাত্রা শুরু করে ভাস্কো দ্য গামার জাহাজ বহর। সেই পথে যেতে যেতে যেখানেই নোঙ্গর করত জাহাজ, সেখানেই পর্তুগিজ রাজার পক্ষে পেড্রো গেঁথে তার দখল নিতেন ভাস্কো। পেড্রো হলো ক্রুশাকৃতির এক ধরনের নামফলক, যেখানে দেশের নাম লেখা থাকত। এভাবে চলতে চলতে এক সময় ভাস্কো দ্য গামা এসে পড়েন আফ্রিকার মোজাম্বিকের কোলিম্যান নদীর তীরে। এরই মধ্যে জাহাজে দেখা দিল স্কার্ভি রোগের প্রাদুর্ভাব। ফলে সেখানেই ভাস্কোকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল এক মাস। ২ মার্চ তার জাহাজ পৌঁছে মোজাম্বিক দ্বীপে। সেখান থেকে তিনি এলেন মালিন্দায়। তার পরিকল্পনা ছিল, মালিন্দা থেকে তিনি ভারতের দিকে যাত্রা করবেন। মালিন্দায় এসে তিনি এক লোককে পেলেন, যে আগে ভারতবর্ষ গিয়েছে। ভাস্কো দ্য গামা ভাবলেন সঙ্গে রাস্তা চেনে এমন লোক থাকলে সুবিধাই হবে। তাই তুলে নিলেন সেই লোককে জাহাজে।
অন্যদিকে আমেরিগো ভেসপুচি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন, কলম্বাসের আবিষ্কৃত ভূখণ্ডটি ভারতবর্ষ নয়। এটি আসলে নতুন একটি দেশ, নতুন একটি মহাদেশ। আমেরিগো যেহেতু প্রথম এই ভুল ভাঙান, তাই তার নামেই এই ভূখণ্ডের নাম রাখা হয় আমেরিকা। কিন্তু কলম্বাসের অবদানও ভুলে যায়নি বিশ্ব। তার সম্মানেই, তিনি যে দ্বীপগুলো আবিষ্কার করেছিলেন, সেগুলোর নাম রাখা হয়েছিল পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ বা দ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ রাখা হয়। তিনি প্রথমে একে ভারত বলে মনে করার কারণেই এ নাম রাখা হয়। এরপর টানা ২৩ দিন জাহাজ চালিয়ে ভাস্কো দ্য গামা পৌঁছেন ভারতের পশ্চিম উপকূলে। ১৪৯৮ সালের ২০ মে ভাস্কো দ্য গামার জাহাজ এসে পৌঁছায় কালিকট বন্দরে। নেমেই তিনি গেঁথে দিলেন পেড্রো। অর্থাৎ পর্তুগালের রাজার পক্ষ থেকে তিনি আবিষ্কার করলেন ভারত। পরবর্তীতে অন্য কোনো ইউরোপীয় দেশ ভারতের স্বত্ব দাবি করতে পারবে না। কালিকটের সেই সময়ের রাজার সঙ্গে দেখা করলেন ভাস্কো দ্য গামা। তাকে খুশি করতে দিলেন পর্তুগাল থেকে আনা অঢেল উপহার সামগ্রী। রাজাও তাকে সাদরে গ্রহণ করলেন। ভাস্কোর ইচ্ছা ছিল রাজার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করবেন। কিন্তু তখন ভারতে ব্যবসা করত আরব বণিকরা। তারা বিদেশি জাহাজ দেখলেই আক্রমণ করে ডুবিয়ে দিত। ফলে তখনই চুক্তি করা সম্ভব ছিল না। তাই কোনো প্রকার বাণিজ্য চুক্তি না করে মন খারাপ হয়েই ফেরত যেতে হয় ভাস্কো দ্য গামাকে। কিন্তু নিজের প্রধান উদ্দেশ্যে সফল হয়েছিলেন ভাস্কো। আবিষ্কার করেছিলেন ভারতের সমুদ্রপথ। অবশেষে সেই সাফল্যের বার্তা নিয়েই তিনি ফেরত যান তার নিজ দেশে। সেখানে তাকে বরণ করা হয় রাজকীয় সম্মানে। দেওয়া হয় প্রচুর ধন-সম্পদ। এর পর আরও দুইবার ভারতবর্ষ অভিযানে আসেন ভাস্কো দ্য গামা। ১৫২৪ সালে, ভারতের কোচিন বন্দরে মৃত্যু হয় সাহসী এই নাবিকের।
0 comments:
Post a Comment