Breaking News
Loading...
Tuesday, April 2, 2013

বিশ্ববিখ্যাত সমুদ্র অভিযাত্রী স্যার ফ্রান্সিস ড্রেক ১৫৪০ সালে ইংল্যান্ডের ডেভন অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম এডমুন্ড ড্রেক ও মায়ের নাম মেরি মেলোয়ে। ফ্রান্সিস ড্রেক ছিলেন মহারানী প্রথম এলিজাবেথের আমলের একজন ইংরেজ নৌ-সেনাপতি, সমুদ্র-অভিযাত্রী ও রাজনীতিবিদ। যে কয়জন অভিযাত্রী সমুদ্রপথে বিশ্বভ্রমণ করেছেন তিনি তাদের অন্যতম। ড্রেকের বাবা চেয়েছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে তিনি যেন ফ্রান্সে সমুদ্রপথে ব্যবসা করতে যান। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেন ড্রেক। কঠোর পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে বাবার সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মন জয় করে নেন। হয়ে উঠেন তার প্রিয়ভাজন। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি তার চাচাতো ভাই স্যার জন হকিন্সের সঙ্গে নতুন বিশ্বের খোঁজে সমুদ্র অভিযানে বেরিয়ে পড়েন। উদ্দেশ্য একটাই- নতুনত্বকে জয় করা। কারণ ছোটবেলা থেকেই খুব চটপটে ও মেধাবী ছিলেন ড্রেক। চেষ্টা করতেন নতুন কিছু সৃষ্টি করতে। ছোটবেলায় নিজের খেলনা ভেঙে নিজেই সেটা জোড়া লাগাতেন। ভাঙা ও গড়ার মাঝে খুঁজে পেতেন আনন্দ। শুরু করেন সমুদ্রযাত্রা। কিন্তু তাদের জাহাজটি মেক্সিকান পোর্টের কাছাকাছি পৌঁছলে স্পেনিয়ার্ডদের হামলার শিকার হন। কোনোমতে তিনি ও তার চাচাতো ভাই জীবন বাঁচিয়ে পালাতে সক্ষম হন। ঠিক তখন থেকেই স্পেনিয়ার্ডরা তার শত্রুতে পরিণত হয়। এ পরাজয় তাকে প্রতিশোধ পরায়ণ করে তোলে। পরবর্তী সময়ে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ অভিমুখে ১৫৭০-১৫৭১ সালে দুটি সমুদ্র অভিযান পরিচালনা করেন। ১৫৭২ সালে তিনি ইসথমাচ অব পানামাতে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন। এ স্থানটিতেই পেরু থেকে আগত স্বর্ণ এবং রৌপ্য জাহাজ পরিবর্তন করে ক্যারিবিয়ান সাগরে পাঠানো হতো। তিনি এ বিপুল সম্পদ অর্জনের জন্য ১৫৭২ সালের ২৪ মে মাত্র ৭৩ জন ক্রু নিয়ে ইসথমাচ অব পানামার উদ্দেশে যাত্রা করেন। পরবর্তী সময়ে তারা স্থানটিতে আক্রমণ চালিয়ে সমস্ত সম্পদ দখল করে নেন। কিন্তু ড্রেক মারাত্মকভাবে আহত হলে তাকে বাঁচানোর আশায় সম্পদ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন সবাই। এরপর আসে তার জীবনের সবচেয়ে সফলতম মুহূর্ত। ১৫৭৭ সালের ১৫ নভেম্বর ইংলান্ডের রানী প্রথম এলিজাবেথের অনুরোধে স্পেনিয়ার্ডদের সঙ্গে ব্রিটিশদের নৌযুদ্ধে তিনি ব্রিটিশ নৌসেনাদের নেতৃত্ব দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এই অভিযানের গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয় তার কাঁধে। তবে খারাপ আবহাওয়ার কারণে তিনি যাত্রা বাতিল করে আবার লেমাউসে ফিরে আসেন। নিজ দেশে তিনি একজন জাতীয় বীর হিসেবে পরিচিত পেলেও অন্যসব দেশে তাকে জলদস্যু, যুদ্ধবাজ, ক্রীতদাস ব্যবসায়ী প্রভৃতি বলে সম্বোধন করা হতো। এমনকি তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য স্পেনের তৎকালীন রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ২০০০ হাজার ডুক্যাটস (বর্তমান সময়ে বার মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘোষণা করেন)। বিশ্ব ভ্রমণের অংশ হিসেবে ১৫৭৭ সালে ইংল্যান্ডের প্রেমাউথ বন্দর থেকে প্যালিক্যান নামক একটি জাহাজে করে বিশ্বভ্রমণে বের হন এবং ১৫০০ সালে ফিরে আসেন। ১৫৮১ সালে নৌপথে বিশ্ব-ভ্রমণ করার মাধ্যমে স্পেনিয়ার্ডদের পরোক্ষভাবে পরাজিত করেন তিনি। ইংরেজদের নাক উঁচু করেন বিশ্ব দরবারে। সমুদ্র যাত্রার এ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবদান রাখার জন্য রানী প্রথম এলিজাবেথ তাকে নাইটহুড উপাধি দেন। এ সাহসী অভিযাত্রী মাত্র ৫৫ বছর বয়সে আমাশয় রোগে ভুগে ১৫৯৬ সালে পানামায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সমুদ্র অভিযানের কথা থাকত মানুষের মুখে মুখে। জীবদ্দশায় বেশ কয়েকটি সমুদ্র অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন ফ্রান্সিস ড্রেক।

0 comments:

Post a Comment