Breaking News
Loading...
Tuesday, April 2, 2013

একজন রাষ্ট্রনায়ক তার কর্মগুণে নিজ দেশের সীমা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও জনপ্রিয় হতে পারেন। তার বাস্তব উদাহরণ মিসরের রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের। তার জানাজায় প্রায় ৫০ লাখ মিসরীয় অংশগ্রহণ করেন। তার শবযাত্রার দৈর্ঘ্য ছিল ১০ কিলোমিটার। সব আরব নেতাসহ বিশ্বের বহু দেশের নেতা মিসরে হাজির হন এই মহান নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। এদের মধ্যে জর্ডানের বাদশা হোসেন এবং ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতকে প্রকাশ্যে কাঁদতে দেখা যায়। আর লিবিয়ার লৌহমানব খ্যাত মুয়াম্মার গাদ্দাফি দুইবার জ্ঞান হারান তার প্রিয় বন্ধুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে। ১৯১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরের ব্যাকস নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন নাসের। বাবা আবদেল নাসেরের ডাক বিভাগে চাকরির সুবাদে ছেলেবেলায় বিভিন্ন এলাকায় বসবাস ও শিক্ষাগ্রহণ করেন গামাল আবদেল নাসের। ছাত্রাবস্থায় তিনি 'ইয়ং ইজিপ্ট সোসাইটি'-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং কায়রোতে ব্রিটিশবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গিয়ে পুলিশের নির্যাতনে আহত হন এবং দুই দিন কারাবরণ করেন। বহু প্রচেষ্টার পর নাসের মিসরীয় রয়েল মিলিটারি একাডেমীতে যোগ দেন এবং অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। সুদানে চাকরি শেষে তিনি ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে অংশ নেন। সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায়ই নাসের 'অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্রি অফিসার্স' গড়ে তোলেন এবং রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেন। ১৯৫২ সালের বিদ্রোহেও নাসের এবং তার দল সক্রিয় থাকেন। ১৯৫৩ সালে রাষ্ট্রপতি নাগিরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন নাসের। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ দখল করে নেন। ১৯৫৪ সালে তার বিরোধী দল মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা আবদেল লতিফ তাকে হত্যার জন্য একজন বন্দুকধারীকে দিয়ে এক জনসভায় গুলি করান, তবে তা ব্যর্থ হয়। কায়রোয় ফিরে নাসের মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বিভিন্ন দলের ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেন। এ সময় কয়েক শ নেতা-কর্মী মিসর ছেড়ে পালিয়ে যান। ১৯৫৬ সালে মিসরের নতুন সংবিধান রচিত হয় এবং একদলীয় শাসন প্রবর্তিত হয়। একই বছর জুনে অনুষ্ঠিত গণভোটে গামাল আবদেল নাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। নাসেরের অন্যতম সাফল্য সুয়েজ খাল সমস্যার সমাধান এবং সুয়েজ খালে মিসরের অধিকার রক্ষা করা। এ ছাড়াও তিনি 'ইউনাইটেড আরব রিপাবলিকান' গঠনেও সমর্থ হন। তিনিই ছিলেন আধুনিক মিসরের রূপকার। বিভিন্ন কারণে ১৯৬৭ সালে একবার তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। কিন্তু জনগণের দাবির মুখে তিনি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য হন। ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ ভাগে আরব নেতাদের নিয়ে সম্মেলন করেন গামাল আবদেল নাসের। সম্মেলন শেষে ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭০ কুয়েতের আমির সাবাহকে (৩) বিদায় জানানোর পরপরই নাসের হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এর আগেও তিনি দুইবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন, যা প্রকাশ করা হয়নি। তবে তৃতীয়বার আর শেষ রক্ষা হয়নি। ওই দিনই মিসর তথা আরববাসীকে শোকসাগরে ভাসিয়ে বিদায় নেন মিসরের দ্বিতীয় এবং সর্বকালের জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের।


মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ [অব.]

0 comments:

Post a Comment