Breaking News
Loading...
Wednesday, December 25, 2013

পৃথিবীর প্রথম মানব আদম (আ.) এর দশম অথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ হচ্ছেন নুহ (আ.)। নুহ (আ.) এর পিতার নাম লামেক। আদম (আ.) পর্যন্ত তার বংশ ধারাবাহিকতা হলোÑ নুহ বিন লামেক বিন মুতাওশালেহ বিন আখনুখ (ইদরিস আ.) বিন ইয়ারিদ বিন মাহলাঈল বিন কানান বিন আনুশ বিন শিষ (আ.) বিন আদম (আ.)। আদম (আ.) কে বলা হয় ‘আবুল বাশার’ (মানবজাতির পিতা) আর নুহ (আ.) কে ‘আবুল বাশার সানি’ বা মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা বলা হয়। আদম (আ.), নুহ (আ.), ইবরাহিম (আ.) ও ইমরান একই বংশধারায়। আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ ‘আল্লাহ আদম, নুহ, ইবরাহিম ও এর বংশ, ইমরানের বংশকে বিশ্ববাসীর ওপর মনোনীত করেছেন, তারা পরস্পর একই বংশের। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩৩-৩৪)। বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে জারির তাবারি (রহ.) সহ অন্যান্য অনেক ঐতিহাসিকের মতে, নুহ (আ.) জন্মগ্রহণ করেন আদম (আ.) এর মৃত্যুর ১২৬ বছর পর। তবে ইবনে আব্বাস (রা.) এর মতে, আদম (আ.) ও নুহ (আ.) এর যুগের মধ্যে ব্যবধান ছিল ১০ শতাব্দীর।

নুহ (আ.) ছিলেন পৃথিবীতে প্রেরিত প্রথম রাসূল। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩২৭)। তিনি কত বছর বয়সে বিবাহ করেছিলেন তা জানা না গেলেও তার চার পুত্র সন্তানের কথা জানা যায়। তারা হচ্ছেনÑ সাম, হাম, ইয়াফিছ ও ইয়াশ অথবা কেনান। প্রথম তিনজন ঈমান আনলেও শেষোক্ত জন কাফের হয়ে প্লাবনে ডুবে মারা যায়। (ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব রচিত নবীদের কাহিনী, ১ম খ-, পৃ. ৫১)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, সাম আরবের পিতা, হাম হাবশার পিতা এবং ইয়াফিস রোমকদের (গ্রিক) পিতা। (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৩০-৩১)।

নুহ (আ.) কত বছর বয়সে নবুয়ত পেয়েছিলেন, সে তথ্যে যথেষ্ট মতানৈক্য রয়েছে। তিনি ৪০, ৫০, ৩৫০, ৪৮০ বছর বয়সে নবুয়ত পেয়েছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। তবে ইবনে আব্বাস (রা.) এর বর্ণনা মতে, তিনি ৪০ বছর বয়সেই নবুয়তপ্রাপ্ত হন। (তফসিরে কুরতুবি ও তফসিরে ইবনে কাছিরের বরাতে নবীদের কাহিনী, খ--১, পৃ. ৫৩ দ্র.)। নুহ (আ.) নবুওয়ত প্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে আল্লাহর আদেশে তিনি তার শিরকে নিমজ্জিত পথভ্রষ্ট জাতিকে আল্লাহর একত্বের (তাওহিদের) সঠিক-সরল পথে আনার জন্য দাওয়াত দেয়া শুরু করেন। তিনি তার জাতিকে আল্লাহর আজাবের ভয় দেখান। (সূরা নুহ, আয়াত : ১)। তিনি এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে জাতিকে আহ্বান করেন। (সূরা আল আরাফ, আয়াত : ৫৯)। কিন্তু তার জাতি তার ডাকে সাড়া না দিলে তিনি দিন-রাত দাওয়াতি কাজ অব্যাহত রাখেন। (সূরা নুহ : ৫-৯)। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দাওয়াত দিয়েও কয়েকজন ছাড়া কেউই ঈমান আনল-ই না বরং তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে লাগল। তাদের কর্মে নুহ (আ.) হতাশ হয়ে তার অবাধ্য জাতির জন্য বদদোয়া করেন। (সূরা নুহ : ২৬-২৭)।

এরপর আল্লাহর পক্ষ থেকে প্লাবনের আজাবের খবর এলে তিনি আল্লাহর আদেশে একটি নৌকা তৈরি করেন। যে ক’জন ঈমান এনেছিল তারাই প্লাবনের সময় নৌকায় আরোহণের মাধ্যমে নাজাত পান। উল্লেখ্য, নুহ (আ.) এর নৌকায় ক’জন ঈমানদার ব্যক্তি আরোহণ করে নাজাত পেয়েছিল, সে বিষয়ে কোরআনে বা হাদিসে কোনো কিছুই বর্ণিত হয়নি। তেমনিভাবে নৌকাটি কত বড় ছিল, কীভাবে ও কত দিনে তৈরি হয়েছিল, এসব বিষয়েও কিছু বর্ণিত হয়নি। এসব বিষয়ে যা কিছু বিভিন্ন তফসিরে বর্ণিত হয়েছে, সবকিছুর ভিত্তি হলো ইসরাঈলি উপকথাগুলো। যার সঠিক কোনো ভিত্তি নেই। (তফসিরে কুরতুবির বরাতে নবীদের কাহিনী, খ--১. পৃ. ৫২ দ্র.)।

কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী নুহ (আ.) ৯৫০ বছর জীবিত ছিলেন। (সূরা আল আনকাবুত : ১৪)। নুহ (আ.) ইরাক-আরবে প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি ইরাকের মুসেল নগরীর উত্তরে ‘ইবনে ওমর’ দ¦ীপের অদূরে আর্মেনীয় সীমান্তে বসবাস করতেন। ইবনে জারির আল-আজরাঝী ঐতিহাসিকদের মতে, নুহ (আ.) এর কবর মসজিদে হারামের কাছে (মক্কায়) পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে আল্লাহই অধিক জানেন। পবিত্র কোরআনে নুহ (আ.) সম্পর্কে ২৮টি সূরায় ৮১টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

0 comments:

Post a Comment